ঢাকার মেট্রোরেলে যুক্ত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। বিদ্যুতে চলা এই রেলে থাকছে ব্যাটারির ব্যাক আপ। যেটাকে বলা হচ্ছে এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম।
কোন কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলে তখন ট্রেনটিকে পরের স্টেশন পর্যন্ত টেনে নেবে এই ব্যাটারি। এই প্রযুক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বলছেন জাপানি প্রকৌশলীরা।
এছাড়া ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও সর্বাধুনিক। জাপানিজ কোম্পানিগুলো এই প্রকল্পে যে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে, সেটি আবার ব্যবহৃত হতে পারে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংকের স্টাডি রিপোর্টে প্রথমবারের মতো এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) করার প্রস্তাব করা হয়।
এরপর জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং ২০০৮ সালে এতে যুক্ত হয়। ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সরকার ঢাকায় এসটিপি তৈরি করে।
ওই এসটিপিতে তিনটি এমআরটি লাইনের প্রস্তাব করা হয়। এসটিপির ওপর ভিত্তি করে জাইকা ২০০৮ সালে আরবান ট্রাফিক ফরমুলেশন স্টাডি করে।
ওই সময়ে এমআরটি লাইন ৬-কে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১০-১১ অর্থ বছরে সমীক্ষা জরিপ (ফিজিবিলিটি স্টাডি) চালানো হয়।
২০১৩ সালে প্রথম ঋণ দেয়া হয় এবং উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং কন্ট্রাকটর নিয়োগ হয়। ২০১৬ সালে কন্সট্রাকশন কাজ শুরু হয়।
নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই সেই স্বপ্ন এখন বাস্তব হতে যাচ্ছে। ২৮ তারিখ উদ্বোধন। আর ২৯ তারিখ থেকেই বাণিজ্যিক চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত এই রেল।
দেশের মেট্রোরেলে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এতে আছে ইএসএস সিস্টেম বা এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম। যা ট্রেন চলাচলের সময়ই শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে।
এই শক্তি জমা থাকবে দুটি বগির নিচে থাকা ব্যাটারিতে। কোন কারণে বিদ্যুত চলে গেলে জমা রাখা সেই শক্তি ব্যবহার করে রেলটি পরের স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারবে।
আধুনিক প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয়েছে ট্রেনে। যা শুধু বগির ভেতর নয়, সবগুলো প্লাটফর্ম ও স্টেশনের উপরও নজর রাখবে।
নিরপত্তা নিশ্চিতে এরিমধ্যে ৩০ জন বাংলাদেশি প্রকৌশলীকে জাপানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের জন্য যে যন্ত্র যুক্ত করা হয়েছে সেটি জাপানেও ব্যবহার হয়নি।
প্রতিটি রেলে থাকছে ছয়টি বগি বা কোচ। তবে প্রয়োজনে বাড়তি আরো দুটি বগি যুক্ত করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারের (ওসিসি) মাধ্যমে পুরো সিস্টেমটা পরিচালিত হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মুভিং ব্লক কমিউনেকশন বেজড টেলি কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে।
অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন বা এটিও থাকবে। এসবের ফলে চালকের কিছু করার থাকবে না। ট্রেনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সেন্ট্রাল কন্ট্রোল যেখানে থাকবে সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে।
ট্রেন অটোমেটিক স্টপ কন্ট্রোলের মাধ্যমে কোথায়, কখন থামাতে হবে সেটি ঠিক হবে। ১৫০ মিলিমিটার অ্যাকুইরেসির মধ্যে এই ট্রেন থামতে সক্ষম।
প্রোগ্রাম রুট কন্ট্রোলার সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় মেট্রোরেলে কোনো সমস্যা হবে না।
একাত্তর/এসি