ড. এ কে আব্দুল মোমেন সৌদি আরবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের মিশনে স্থায়ী প্রতিনিধির মতো গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন অনেক বছর। শেষ দায়িত্বে গত পাঁচ বছর দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এবার মন্ত্রী না হলেও আপসোস নেই, বরং উত্তরসূরি হাসান মাহমুদকে বেশ যোগ্য মনে করেন তিনি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমলাতন্ত্র আর অদক্ষতা নিয়ে হতাশা আছে তার।
আরও হতাশ প্রবাসী বান্ধব দূতাবাস বাস্তবায়ন করতে না পারায়। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপিয়ান আর আমেরিকানদের বাড়াবাড়ির কথাও স্মরণ করেন তিনি। বাংলাদেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে ভারসাম্যমূলক কূটনীতির পক্ষে তিনি- সে হোক আমেরিকা, চীন কিংবা ভারত। মন্ত্রিত্ব থেকে অবসরের পর একাত্তরের জুলিয়া আলমকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আরও অনেক কিছুই বলেছেন এই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জুলিয়া: মন্ত্রিত্ব থেকে অবসরের পর এমন কি অনুভূতি কিংবা উপলব্ধি হচ্ছে যা, আপনার ভাবনায় আগে ছিলো না কিন্তু এখন হচ্ছে?
ড. মোমেন: মন্ত্রিত্ব ইজ নট গ্যারান্টেড। মন্ত্রিত্ব থেকে সরে আসার পর এলাকাবাসীরা আমার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করছেন তারা যথেষ্ট দুঃখ পেয়েছেন। তারা আমাকে এতো ভালোবাসেন আগে টের পাইনি। তারা এসে কান্নাকাটি করছে, আমার জন্যে তারা রোজা রাখছে, দোয়া করছে- এটা আমার খুব বড় পাওয়া। ন্যাচারালই তাদের জন্য আমার কিছু করা দরকার। কারণ তারা বড় কষ্টে আছে, বিভিন্ন রকম হয়রানিতে থাকে। তাদের কষ্ট যদি কিছুটা কমানো যায় তাহলে এটা আমাদের জন্য অর্জন। আর আমিতো প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলাম সেগুলো সবই চলমান। বাংলাদেশে কোনো কিছুই শেষ হয় না, দিনের পর দিন খালি বাড়ে। তিন বছরের প্রজেক্ট সাত-আট বছর লাগে। ফলে অধিক খরচ হয় এবং মানুষেরও হয়রানি হয়। হয়রানির অংশ অনেকে দেখে না এইটা বড় ত্যক্ত করে এবং জনগণ বড় অসন্তুষ্ট থাকে হচ্ছে হচ্ছে কিন্তু তাদের বারোটা বাজে রাস্তা অর্ধেক কেটে রেখে দিলো তো খোঁজ নাই। কিন্তু অন্যদিকে আমাদের সরকার বেশ করিৎকর্মা- যেদিন মন্ত্রীসভার শপথ হলো এগারো তারিখ ঐদিনই আমার এখানে গাড়ি ছিল আমার ড্রাইভার ছিল আমাকে জিজ্ঞাস না করে উনারা চলে গেলেন। কারণ ওদের হুকুম দিয়েছে মিনিস্ট্রি যাওয়ার জন্য। আমরা তো তাজ্জব, দেখি কেউ নাই। সরকার একটা সেলফোন দিয়েছিলো সেটাও উনারা পরের দিন এসে নিয়ে গেছে; যদিও ঐটা আমি ইউজ করিনা। এসব ব্যাপার খুব করিতকর্মা।
জুলিয়া: অনেকেই ভেবেছিলেন আপনি আবারও মন্ত্রী হচ্ছেন। কিন্তু অবশেষে মন্ত্রী তালিকায় না থাকার বিষয়টি আপনি কীভাবে নিয়েছেন?
ড. মোমেন: মন্ত্রিত্ব হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একেবারে আপন ইচ্ছা ও আস্থার ওপর এবং উনি অনেক ক্যালকুলেশন করে করেন। উনি আমাকে পাঁচ বছর সময় দিয়েছিলেন আমি ভালোভাবে কাজ করেছি। এই ৫ বছর, দেশের মান সম্মান অনেক উপরে উঠিয়েছি। আমি কারো লেজুড় হয়নি, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র সেটা আমি প্রমাণ করেছি এবং আই হ্যাভ নো রিগ্রেট। আমি প্রাউড ফিল করি ফর মাই টেনর। উনি এবার আমাকে মন্ত্রিত্ব দিলেন না দিজ ইজ ইম্যাটারিয়াল। আমার তো এখনো দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে প্রতিদিন ইন্ট্রোডিউস করেছি আমার দেশকে। আমার সরকারি সিস্টেমের অনেক দুর্বলতার জন্য আমার দেশের রাঙ্কিং-কস্ট অব ডুইং বিজনেস ১৬৮তে। প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড তাদের বুদ্ধিশুদ্ধি আমাদের থেকে খুব বেশি না। কিন্তু তাদের রাঙ্কিং ২৩। আমি রিসার্চ করেছিলাম আমেরিকাতে একশোটা বিনিয়োগ প্রস্তাব আসলে একশোই বাস্তবায়িত হয় আর আমাদের দেশে বাস্তবায়িত হয় একশোতে তিনটি। অযথা আইনকানুন বিনিয়োগ আটকায়। প্রজেক্ট আসলে এতো দীর্ঘায়িত হয় যে অন্য দেশে চলে যায়।
জুলিয়া: নির্বাচনের আগে বেশ কিছু সময়ে আপনার নানা মন্তব্য ও বক্তব্য ঘিরে অনেক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। অনেকে মনে করেন যে আসলে মন্ত্রী তালিকায় না থাকার পেছনে সেগুলো অন্যতম কারণ।
ড. মোমেন: না আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। আমি যেগুলো বলেছি সবগুলো সত্যি কথা বলেছি। অনেক সময় মিডিয়া বিকৃত করেছে ফলে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীতে গিয়েছিলাম সেখানে ওরা নানা ধরণের প্রশ্ন করলো আমি তখন বললাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তির প্রতীক, শেখ হাসিনা হচ্ছেন এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নতির জন্য অত্যাবশ্যক। আমি ভারতকে বলেছি দেখুন পাক-ভারত উপমহাদেশে খুব অল্পতেই হৈচৈ হয়, তাতে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের দুর্গতি বাড়ে। তাই বলছি আমাদের সবার উদ্যোগই হওয়া উচিত আমরা এমন কিছু করবোনা যাতে এই এলাকায় শান্তি এবং স্থিতি বিঘ্নিত হয়। বাংলাদেশি হিসেবে শেখ হাসিনা শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক এই জন্য হোয়াটএভার উই উইল ডু টু কিপ হার। শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার জন্য তোমাদেরও দরকার। এটাকে বিভিন্ন লোকে বিভিন্ন রকম বিকৃত করে।
জুলিয়া: বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তে আছে এরকম একটা মন্তব্য আপনি করেছিলেন।
ড. মোমেন: সিলেট গিয়েছিলাম। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে আমরা ঐটা নিয়ে উদ্বিগ্ন তবে দাম বাড়লেও কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় ভালো। দেখেন আফগানিস্তানে মসজিদে যেতে পারে না। তাদের জীবনটা কিরকম অতিষ্ঠ। আর পাকিস্তানে মসজিদে গেলে বোমাবাজিতে মানুষ মরে এইসবের তুলনায় আমরা কিন্তু বেহেস্তে আছি। আমি কথাটা এভাবে বলেছি। অন্যসব বাদ দিয়ে আপনারা তুলে ধরেছেন বেহেস্তে আছি। আরেকটি ঘটনা প্রেসক্লাবে কি হয়েছিল অন্য একজন বক্তব্য দিয়েছে আর তার বক্তব্য দিয়ে আঠারোটা মিডিয়া নাম দিয়ে দিয়েছে আমার।
জুলিয়া: এই বিষয়গুলো কি আসলে আপনার ইমেজ খানিকটা নষ্ট করেছে।
ড. মোমেন: নো নো আই ডোন্ট থিঙ্ক সো।
জুলিয়া: আপনার কাছে এবার মন্ত্রীসভা কেমন মনে হলো? নতুন মন্ত্রীদের সক্ষমতা ও সম্ভাবনা কেমন দেখেন।
ড. মোমেন: ড. হাসান মাহমুদ হি ইজ ভেরি আর্টিকুলেট ম্যান, খুব ভালো মানুষ। আমি সবার কথা বলতে পারবো না সবার সাথে কাজ করিনি উনার সাথে অনেক দিন কাজ করেছি। আই থিঙ্ক হি ইজ ভেরি গুড পারসন।
জুলিয়া: সাবেক তথ্যমন্ত্রী এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে আপনার পদে এসেছেন। তার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. মোমেন: উনার প্রত্যেকটা বক্তব্য অনেক সুন্দর, অনেক গুছিয়ে কথা বলেন অনেক হাসি হাসি করে বলেন। আই এম ভেরি প্লিজড হাসান মাহমুদ ইজ এন এক্সসেলেন্ট পারসন তিনি যা করছেন খুব ভালো।
জুলিয়া: অন্য যারা এবার মন্ত্রিসভায় এসেছেন যাদের যে মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে তারা কতোটা ক্যাপাবল মনে করেন?
ড. মোমেন: আসলে এ জাজমেন্ট আমার করার কথা না। তাদের কেন মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী ভালো বোঝেন। দেখেন উনি পাঁচ পাঁচ বার সিলেক্ট হয়েছেন। বিভিন্ন সমস্যা আছে বাট সি হ্যাজ ওভারকাম অল, সি ইজ ট্রু লিডার। উনি জানেন কার কী পটেনশিয়াল আছে। আমি এটুকু বলতে পারি উই উইল হেল্প এন্ড সাপোর্ট দেম।
জুলিয়া: নির্বাচনের আগে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে আসা প্রচ্ছন্ন চাপ মোকাবেলায় আপনার তৎপরতা বেশ লক্ষণীয় ছিল। তাদের তৎপরতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ?
ড. মোমেন: আসলে বিদেশিদের তৎপরতায় আমাদের চাপ ছিল না। আমরা নিজেদের চাপে ছিলাম। আমরা সুন্দর, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ফ্রি ফেয়ার ট্রান্সপারেন্ট নন-ভায়োলেন্ট ইলেকশন দিবো। আমরা প্রমাণ করেছি আমরা সত্যি ডেলিভারি দিতে পারি। জনগণ রায় দিয়েছে, ওরা বলেছে ভোট কেন্দ্রে যেও না গেলে বউ তালাক হয়ে যাবে কতো রকম কাহিনী। কিন্তু জনগণ স্বেচ্ছায় ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে ভোট দিয়ে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ এই দেশের লোক তার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে জানে।
জুলিয়া: কিন্তু বড় একটি রাজনৈতিক দলতো অংশগ্রহণ করলো না!
ড. মোমেন: তাতে কি! নির্বাচনে আসা না আসা তাদের ইচ্ছা। অন্যদিকে আপনার ভোট আপনি দেবেন। যদি তারা নির্বাচনে আসতো তাদের অবস্থা অনেক ভালো হতো।
জুলিয়া: সরকার গঠনের পর থেকে চীন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের দৌড়ঝাঁপ বেশ লক্ষণীয় ছিলো। আজ এই মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ তো কাল অন্য মন্ত্রী। এমন সুপার একটিভ হওয়ার বিশেষ তাৎপর্য আছে কী?
ড. মোমেন: মন্ত্রী থাকাকালে কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে ঢুকতে চাইনি। বিদেশিরা অনেক সময় অনেক কিছু করেন নিজেদের ভাবনা এবং স্বার্থের জন্য। আমি সবার সাথেই বন্ধুত্ব রাখতে চাই। তারা আমাদের সাহায্য করতে তৎপর এটাতো ভালো।
জুলিয়া: একটু বেশি একটিভ মনে হচ্ছে কি?
ড. মোমেন: এটা তাদের ইস্যু, আমাদের না। ওদের জিজ্ঞাসা করুন।
জুলিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে আপনার কাছে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী মনে হয়েছে? সফলতা ও ব্যর্থতাগুলো কী ছিল?
ড. মোমেন: আমিতো সফলতাই দেখেছি। গত পাঁচ বছরে যে উন্নতি দেখেছি বিভিন্ন দিক থেকে তা হলো পলিসি দিক আমাদের ভালো ছিলো। বিভিন্ন দেশে আমাদের মান-ইজ্জত অনেক বেড়েছে। আগে কোনো এপয়েন্টমেন্ট পেতে গেলেও ধর্না দিতে হতো। আর এখন প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান উনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমাদের কাছে রিকোয়েস্ট করেন, এটা আমাদের অর্জন। আর আমরা মোটামুটিভাবে যা চেয়েছি আরব আমিরাতে লেবার মার্কেট খুলে দিয়েছি, সৌদি আরবের দরজা খুলে দিয়েছি, লোক যাচ্ছে মালয়েশিয়াতে। প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক এতো ভালো যে এগুলো আমাদের বড় অর্জন। আর বড় বড় দেশগুলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সদস্য- আপনার ইউএস বলেন, ফ্রান্স বলেন, ইউকে বলেন চীনা বা রাশিয়া সবার সাথেই আমাদের সম্পর্ক গভীর।
জুলিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি যদি আপনাকে মার্কিং করতে বলি যে দশ নাম্বারের মধ্যে কতো দিতে চান নিজেকে?
ড. মোমেন: আপনি বলেন। আমি নিজে বললে হবে না। আমিতো মনে করি আমি সাকসেসফুল। বাংলাদেশের ডিগনিটির জন্য যা যা করার আমি তাই করেছি এবং দেশের সম্মান অনেক উপরে নিয়ে গেছি, দেশের ইজ্জত বিক্রি করিনি কখনো।
জুলিয়া: মন্ত্রী থাকাকালীন এমন কোনো কাজ আছে যা আপনি করতে চেয়েছেন কিন্তু পারেননি?
ড. মোমেন: একটা ঘটনা বলি। সেটা হলো- মিনিস্ট্রিতে চেয়েছিলাম বাইরে থেকে লোক নেয়ার, কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। আমি এক সময় বিদেশে সরকারি চাকরি করতাম। সৌদি আরবে দেখলাম ব্রিটিশ কনসালটেন্ট ইকোনমিস্ট পত্রিকায় অ্যাড দিল, অনেকে অ্যাপ্লাই করলেন, ওরা একজনকে নিলো। আমি ওখানে কাজ করতাম। আমার একজন কাউন্সিলর আসলো কাছেই বসতো সে প্রাইভেট পার্সন। সে কিন্তু রাজনৈতিক কারণে পোস্টটা পায়নি এবং এই ট্রেড কাউন্সিলর বিভিন্ন কোম্পানিতে যায়, অফিসে যায় সৌদির অর্থনৈতিক স্বার্থ দেখতে। সে ইন্ডিয়া যায় আমেরিকা যায় সৌদি পণ্য বিপণন করতে।
জুলিয়া: আপনি দীর্ঘ সময় বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন। এরপর সরাসরি মন্ত্রী হয়ে তাদের পরিচালনা করেছেন আপনার বিবেচনায় আামদের কূটনীতিকদের মেধা কেমন?
ড. মোমেন: আমাদের কূটনীতিকদের ব্যক্তি সম্পর্ক দুর্বল।
আমি ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে অনেক কিছু অ্যাচিভ করতে পেরেছি। লেবানন বর্ডারে আমাদের নেভাল ফোর্সের ৪৪২ জনের মতো আছে। দুটো গানবোট নিয়োজিত আছে যা অর্জন হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে। একজনের সাথে আমার পরিচয় কাজে লাগিয়ে এটা করেছি। এমন অনেক কিছু আদায় করেছি আমি। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে আমি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে ইলেকশনে কখনো হারি নাই, সব কয়টাতে জিতেছি এই সম্পর্কের কারণে। আমি যখন পারমানের্ন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ হলাম প্রত্যেকটা সার্ক কান্ট্রির অ্যাম্বাসাডার, সবার বউ বাচ্চাকে আমাদের বাড়িতে দাওয়াত দিলাম-এই যে একটা সম্পর্ক হলো নাউ দে আর গুড ফ্রেন্ডস। ওআইসিতে আমরা যারা মন্ত্রী ছিলাম সবাই বেশ একে অপরকে চিনি তাই একজন আরেকজনের কথা শুনবো। ডিপ্লোমেটরা সব সময় বাংলাদেশের কোনো সেক্রেটারি সাহেব মন্ত্রী সাহেব গেলে বাঙালিদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন এটা না করে এই খরচটা অন্যদেশের ডিপ্লোমেট ও অন্যদের নিয়ে করতে পারেন। হোয়াট হাউজের কারো কারো সাথে আমার সম্পর্কের কারণে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ওবামার প্রথম ডিনার হয়েছিলো। সম্পর্কের কারণেই হোয়াট হাউজে আমার বন্ধু এমনকি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো ডিনার টেবিলের ডিজাইন কী হবে। তাই আমরা ডিপ্লোমেটদের বলি ইউ নেভার নো সম্পর্কে কখন লাভ হবে কখন কাজে দিবে দিস ইজ ইম্পরট্যান্ট।
জুলিয়া: বিদেশে প্রবাসী বাঙালিদের সেবা এবং সংযোগের ক্ষেত্রে আমাদের দূতবাসগুলো অন্য দেশের থেকে অনেকে পিছিয়ে। কেন এমন? আর এনিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
ড. মোমেন: আমি বিশ্বাস করি প্রবাসীদের অভিযোগ আসলেই সত্যি। আমি নিজে দেখেছি দূতাবাসগুলোতে যদি ফোন করা হয় কেউ ফোন ধরে না বাজতেই থাকে কেউ ধরে না। কিন্তু বিদেশিরা যেই ওখানে থাকে সাথে সাথে ফোন ধরবে। আমি আমেরিকা ছিলাম বহু বছর ওখানে একটা ফোন হলেই কাছে যেই আছে সেই পিক করে বলে হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ? আমরা সেই মেন্টালিটি তৈরি করতে পারিনি। তাই আমি হটলাইনও চালু করেছি। কখনো ফোনটা ধরলেও এমন ভাব দেখাবে যে খুবই বিরক্ত। দেখুন এই সেবাটা আমার প্রবাসীদের নিতান্তই প্রয়োজন। প্রবাসীরা আপনার খাজুরে গল্পের জন্য ফোন করে না।
জুলিয়া: জিওপলিটিক্যাল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে?
ড. মোমেন: বঙ্গবন্ধু আমাদের যে পলিসি দিয়ে গিয়েছিলেন সবার সাথে সম্পর্ক কারো সাথে বৈরিতা নয়। দিস ইজ এন এক্সসেলেন্ট ফিলোসোফি এন্ড গাইডলাইন। অন্যরা ঝগড়া করুক আমরা ঐটাতে নাই। ধরুন ইন্ডিয়ার সাথে আমাদের খুব ভালো। সম্পর্ক একই সাথে আমরা চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। চীন ও ইন্ডিয়ার মধ্যে ঝামেলা আছে এটা আমার বিষয় না আমরা দু পক্ষের সাথেই সম্পর্ক ম্যানেজ করে চলেছি। আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে ঝামেলা আছে, তাতে কী! আমরা আমেরিকার সাথেও সুসম্পর্ক রাখবো আবার চীনের সাথেও। অন্যদের সমস্যায় আমি মাথা গলাব না। আমরা যে পথে চলছি আমার মনে হয় উই আর ফলোইং রাইট ওয়ে।
জুলিয়া: সাবেক মন্ত্রী নয়, একজন প্রবীণ দেশপ্রেমিক সিনিয়র নাগরিক হিসেবে আপনার কাছে শুনতে চাই বিশ্বে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থানটা কোথায়? আমরা কোন দিকে যাচ্ছি?
ড. মোমেন: আমার মনে হয় আমাদের দেশে মারামারি বন্ধের জন্য কিছু সহনশীলতা প্রয়োজন। কারণ দেশটাতো আমাদের সবার। আমি খুব দুঃখ পাই আমাদের অপজিশন আছে তাদের সাথে আমাদের কোনো উঠাবসা নাই, কোনো আলাপও হয়না। ওদের সাথে আলাপটা বাড়ানো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। এটাও ঠিক যে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দল যারা তারা সবসময় সন্ত্রাসীভাব নিয়ে ব্যস্ত থাকে একটা যুদ্ধংদেহী মানসিকতা নিয়ে থাকে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে একটা সুন্দর পরিবেশ সময়ের দাবি। আর রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দিতে হবে।
জুলিয়া: একাত্তর টেলিভিশনকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. মোমেন: আপনাকেও ধন্যবাদ