সাতক্ষীরা-৩ আসনকে বলা হচ্ছে ভিআইপিদের আসন। কারণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন এই আসনে প্রার্থীর তালিকায়। এখানে প্রার্থী হতে চান শিল্পপতিরাও। জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি এ আসনে এখনও অসংখ্য কর্মী-সমর্থক রয়েছে । আসনটিতে সব সময়ই ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকে। এবারও সেই সম্ভাবনা প্রবল। তবে সমস্যা আছে সব বড় দলেই।
তবে, ভোটারদের মনোবেদনা রয়েছে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে। এরইমধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক জানিয়েছেন, স্থায়ী বেড়িবাঁধ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। খুব শিগগির আশাশুনি-দেবহাটা ও কালিগঞ্জের মানুষ সুখবর পাবেন।
আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জে গেল কয়েক বছরে নানামুখী উন্নয়ন হলেও, এখানে প্রধান সমস্যা লবণাক্ততা এবং বেড়িবাঁধের ভাঙন প্রতিরোধ হয়নি। এ আসনে প্রধান অর্থনৈতিক কার্যক্রম চিংড়ি চাষ। তাই চাষিরা বলছেন, তাদেরও দরকার স্থায়ী বেড়িবাঁধ। এর নিশ্চয়তার ওপরই নির্ভর করে এ আসনের আগামী নির্বাচন।
১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দুবার জয়ী হয় জামায়াত। ২০০৮ এর নির্বাচনে দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার পাশাপাশি কালিগঞ্জের ৪টি ইউনিয়ন সংযুক্ত হয়। এ সময় প্রথমবারের মতো জয়ী হন অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনিই এই আসনের এমপি।
পেশায় চিকিৎসক আ ফ ম রুহুল হক ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও নলতায় ম্যাটসসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি বলেন সুযোগ পেলে সব সময় তিনি নিজের জেলার জন্যে কাজ করেছেন।
তবে তার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে তার যোগাযোগ কম এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন তিনি। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান।
রহুল হক ছাড়াও সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান নর্দান ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদল্লাহ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মোস্তাকিম, গোলাম মোস্তফা, শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনসহ আরও অনেকে।
রুহুল হক এমপি বলেন, দলীয় কোন্দল আছে, তবে তা সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত। ব্যক্তি ইমেজে তিনি এলাকায় ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের অন্য যেকোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করুক না কেন দলের নির্বাচকদের দৃষ্টিতে তিনিই এগিয়ে-এমনটাই মনে করেন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ড্যাব নেতা ডা. সহিদুল আলম। এলাকায় তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ে নিয়ে তিনি দাবি করেন, আমি হারিনি। আগের রাতে ভোট কেটে আমাকে হারানো হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা ডাকসুর মিলনায়তন সম্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকী এবার বিএনপির মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এই আসন থেকে এ পর্যন্ত একবার জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা স ম সালাহউদ্দিন। এর আগে ১৯৮৬ সালের ৭ মে মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়নের তালিকায় সালাহউদ্দিনসহ দেবহাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল ফজল ও ছাত্র সমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা স ম আলিফের নাম শোনা যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই মজবুত। ২০১৩ সালে আশাশুনির তালতলা বাজারে সাঈদী মুক্তি মঞ্চ তৈরি করে দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল জামায়াত। এ আসনে জেলা জামায়াতের আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশারকে এবার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কর্মীরা নীরবে তাদের কাজ করছে।
তিন উপজেলার মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১০৭ নম্বর সাতক্ষীরা-৩ আসন। নতুন সীমানা অনুযায়ী এই আসনে যুক্ত হয়েছে আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার ৫টি এবং কালিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন। এটি কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা ও দেবহাটা, আশাশুনি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৮৪ সালে সৃষ্ট এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় চার লাখ।
এআরএস