রাজধানীর
মতো দেশের বিভিন্ন জেলাতেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সাধারণ মানুষের আমিষের অন্যতম সস্তা
উৎস ডিম। দোকানিরা বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা
করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বর্ষায় খামারের ক্ষতি হয় বলে প্রতি বছর এই সময় ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার দাম বৃদ্ধি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ডজন হিসেবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়।
বাজারে বাদামি ডিমের হালি এখন ৬০ টাকা। সাদা ডিম ৫৫ টাকা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। পাইকারিতেই বাদামি ডিমের শ’ বিক্রি হচ্ছে ১২৭০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৭০ পয়সা। হালি হিসেবে করলে আসে ৫০ টাকা ৮০ পয়সা। আড়তে ১০০ সাদা ডিমের ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যে দামটা ছিলো এক হাজার ৮০ থেকে ১১শ’ টাকা।
গত বছরের এই সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিলো। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডিমের বাজারের মাত্র ২০ শতাংশ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দখলে। কিন্তু বাকি ৮০ শতাংশ ডিমের দাম তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
রোববার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দরকার পড়লে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণলায়ের সঙ্গে কথা বলে ডিম আমদানি করা হবে। তবে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মনে করছেন, বাজারবিন্যাস করতে পারলে ডিম আমদানির প্রয়োজন পড়বে না।
নোয়াখালীতে চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
নোয়াখালীতে মুরগির ডিমের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শনিবার জেলার চৌমুহনী বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কাওছার মিয়া।
অভিযানে দেখা যায়, প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা নেয়ার কথা থাকলেও এক টাকা বেশি ১৩ টাকা ৫০ পয়সা নিচ্ছে দেলোয়ার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে, বেশি দামে বিক্রি ও মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার প্রমাণ পাওয়ায় গেছে ইব্রাহিম বাণিজ্যালয়, হোসেন অ্যান্ড ব্রাদার্স ও বলাকা এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর দেলোয়ার এন্টারপ্রাইজকে তিন হাজার টাকা, বেশি দামে ডিম বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় ইব্রাহিম বাণিজ্যালয়, হোসেন অ্যান্ড ব্রাদার্স ও বলাকা এন্টারপ্রাইজকে দুই হাজার টাকা করে মোট ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রামে ডজনে বেড়ে ১৫-২০ টাকা
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে গতসপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিমের এই বাড়তি দাম। তারা আরও জানান, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে শনিবার বেশি দামে ডিম বিক্রি, ক্রয়মূল্যের সাথে বিক্রয়মূল্যের অসংগতিসহ নানা অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী বাজারে ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়ে দুটি আড়তকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
নারায়ণগঞ্জে হালিতে বেড়েছে ১১ টাকা
নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজারে ডিমের দাম এক লাফেই হালিতে বেড়েছে ১১ টাকা। দুইদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা হালি দরে যা রোববার বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা। দেশি মুরগীর ডিমের দাম ছিলো ৭০ টাকা হালি যা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। খুচরা বাজারে নেয়া হচ্ছে হালি প্রতি আরও ১০ টাকা বেশি। তবে হাঁস ও কক মুরগীর ডিমের দাম রয়েছে আগের মতোই। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, তারা যেসব স্থান থেকে ডিম আনেন সেখানে দাম বাড়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ক্ষুব্দ ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেট এসব দরদাম নিয়ন্ত্রণ করছে। যেখানে সরকারি মনিটরিংয়ে দুর্বলতা রয়েছে।
খুলনায় ডিম নিয়ে পাল্টাপাল্টি
খুলনায় ডিমের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। বিভিন্ন দোকানে দেখা মেলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ডিম। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে।
এদিকে ক্রেতারা উচ্চ মূল্যের কারণে ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যে ডিম এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হত ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা প্রতি হালি, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা প্রতি হালি।
একাত্তর/কেএসএইচ