ইউক্রেন সংকটের মধ্যে রাশিয়ার বেশ কিছু ধনকুবের ব্যবসায়ীর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন সরকার। তাদের প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ভাবা হয়।
আলীশের উসমানভ
এমন কয়েকজনের তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। যেখানে তালিকার শুরুতেই রাখা হয়েছে আলীশের উসমানভকে। তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্য।
আলীশের উসমানভ রাশিয়ার শীর্ষ বিত্তবানদেরও একজন, তাকে পুতিনের সবচাইতে কাছের অলিগার্কদের একজন বলা হয়।
ফোবসের তথ্য অনুযায়ী তার সম্পত্তির পরিমাণ সাড়ে ১৭শ’ কোটি ডলারের বেশি।
সাবেক পেশাদার ফেন্সার উসমানভকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একজন ‘ব্যবসায়ী-কর্মকর্তা’ বা ‘কর্মকর্তা ব্যবসায়ী’ হিসেবে বর্ণনা করে বলছে, তিনি প্রেসিডেন্টের ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেন।
উজবেকিস্তানে জন্ম নেয়া এই ব্যবসায়ী ইউএসএম হোল্ডিংস নামে এক বিশাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এই প্রতিষ্ঠান মাইনিং এবং টেলিকম ব্যবসার সাথে যুক্ত, রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক মেগাফোনের মালিক এই প্রতিষ্ঠান।
গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ। একই পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যও।
তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে অন্যায্য এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
ওলেগ ডেরিপাসকা
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওলেগ ডেরিপাসকাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ক্ষমতায় আসেন তখন ওলেগ ডেরিপাসকা ছিলেন অসম্ভব ধনবান একজন মানুষ। সে সময় তার বিত্তের পরিমাণ ছিল ২৮ শত কোটি ডলার, কিন্তু এখন তিনি বড়জোর ৩০০ কোটি ডলারের মালিক।
নব্বইয়ের দশকে রাশিয়ার অ্যালুমিনিয়াম শিল্প থেকে বিপুল অর্থের মালিক হন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তিনি মানিলন্ডারিং, ঘুষ, চাঁদাবাজি এবং ফন্দিফিকিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে ‘একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা এবং রাশিয়ার সংঘবদ্ধ অপরাধীদের সাথে যোগসাজশ’ -থাকার অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইগর সেচিন
ইগর সেচিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ। ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ইগর সেচিনের সম্পর্ক বহুদিনের এবং গভীর। ইইউ ২৮শে ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। তিনি পুতিনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের একজন।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে দ্রুতই উন্নতি করেছিলেন তিনি। রাশিয়ার গণমাধ্যমে তাকে ডার্থ ভেডার নামে ডাকা হয়।
২০০৮ সালে মার্কিন দূতাবাসের ফাঁস হওয়া এক তারবার্তায় তাকে ‘এত রহস্যময় যে ঠাট্টা করে বলা হয় যে ওই নামে আদতে কেউ নাও থাকতে পারে, যিনি হয়ত ক্রেমলিনের তৈরি এক ধরণের কাল্পনিক চরিত্র, যাকে ভয় দেখানোর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালে তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যাকে তিনি ‘সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
২৪শে ফেব্রুয়ারি তার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া হয়।
সেচিন কখনো রাজনীতি এবং কখনো ব্যবসা এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, কখনোবা দুই ক্ষেত্রেই একসাথে উঁচু পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আলেক্সি মিলার
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন আলেক্সি মিলার। তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের পুরনো বন্ধু। খুবই রহস্যময় এই লোক প্রেসিডেন্টের সাথে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছেন।
২০০১ সালে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম পরিচালনা করেছেন। যদিও তার নিয়োগটি ছিলো অপ্রত্যাশিত এবং ধারণা করা হয়েছিল তিনি কেবল তার সাবেক বসের নির্দেশ মতো চলবেন।
২০০৯ সালে মস্কোয় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত গ্যাজপ্রমকে ‘অদক্ষ, রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে নেয়ার পর মিলারের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি, কিন্তু ২০১৮ সালে যখন তালিকায় তার নাম উঠলো তখন তিনি বলেছিলেন যে বিষয়টি নিয়ে তিনি গর্বিত।
রাশিয়ার বাইরে তার কোন সম্পদের হদিস জানা যায়নি, এবং তার মোট সম্পদের পরিমাণও জানা যায়নি।
পিওতর আভেন এবং মিখাইল ফ্রিডম্যান
ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পিওতর আভেন এবং মিখাইল ফ্রিডম্যান।
পিওতর আভেনকে ইইউ পুতিনের ঘনিষ্ঠ অলিগার্ক বলে থাকে, এবং মিখাইল ফ্রিডম্যানকে বলা হয় পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহচরদের একজন। এই দুইজন একত্রে রাশিয়ার বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক আলফা-ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের স্বাস্থ্য সেবা ‘ধ্বংসের’ মুখে: ডব্লিউএইচও
২০১৬ সালে মি. পুতিন ভবিষ্যৎ নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের সতর্ক করেছিলেন। এ সপ্তাহেই লেটারওয়ান নামে একটি ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, যেটি প্রায় ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই দুইজন, এবং যার প্রধান কার্যালয় লন্ডনে, সেখান থেকে তারা সরে দাঁড়িয়েছেন।
কারণ ২৮শে ফেব্রুয়ারি ইইউয়ের দেয়া নিষেধাজ্ঞায় ওই প্রতিষ্ঠানে তাদের শেয়ার ফ্রিজ করা হয়।
আভেন লন্ডনের রয়্যাল একাডেমী অফ আর্টসের ট্রাস্টি বোর্ড থেকেও পদত্যাগ করেন।
দুই ব্যবসায়ী বলেছেন যে তারা ‘তাদের বিরুদ্ধে আনা বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের সত্যতা চ্যালেঞ্জ’ করবেন।
ফ্রিডম্যানের সম্পদের পরিমাণ ১২শ’ কোটি ডলার।
একাত্তর/আরএ