টানা তিন বছর ‘জিরো কোভিড নীতি’ অবলম্বনের পর চীন হলো বিশ্বের সবশেষ বড় অর্থনীতির দেশ যারা এই ভাইরাসটির সঙ্গে বসবাসের বাস্তবতা মেনে নিলো। গেলো সপ্তাহ থেকে বেশ কিছু কঠোর বিধি নিষেধ দিয়ে ৮ জানুয়ারি থেকে সীমান্ত খুলে দিচ্ছে চীন।
তবে এরিমধ্যে দেশটিতে করোনা ভাইরাসের ব্যাপক হারে সংক্রমণ ঘটছে। শনাক্তের এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির সঠিক চিত্র নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের অনেক দেশ সংশয় প্রকাশ করেছে, যদিও বেইজিং সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ব্যাপক সংক্রমণ বাড়ার সময় যখন চীন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করছে তখন বিশ্বের বিভিন্ন বার্তা সংস্থাগুলো খবর দিচ্ছে হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, বয়স্কদের মৃত্যু হচ্ছে এবং শ্মশানগুলো পূর্ণ। এনিয়ে দেশটির তরুণ প্রজন্ম দারুণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
তাদের দাবি, টানা তিন বছর সরকারের নেয়া সব ধরনের পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। এই সময়ের মধ্য চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানো এবং টিকা কর্মসূচি জোরালো না করে গণ পরীক্ষার পাশাপাশি একের পর এক লকডাউনে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
অনেক চীনা নাগরিক দেশ ছাড়ছেন। সংক্রমণের তীব্রতার কারণে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, তাইওয়ান ও বাংলাদেশ তাদের দেশে চীনা ভ্রমণকারীদের প্রবেশে পরীক্ষা করতে সতর্কতা অবলম্বন করছে। ঢাকায় আগত চার চীনা নাগরিকের দেহে পাওয়া গেছে নতুন ধরন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজ দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠিকে রক্ষার জন্য চীনের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই স্বেচ্ছায় করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা মনে করছেন, ব্যাপক হারে সংক্রমণ হলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন হবে এবং বয়স্ক নাগরিকদের রক্ষা করা যাবে।
সাংহাইয়ের কয়েকজন তরুণ নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানিয়েছে, গেল তিন বছরে তারা কোন ধরনের টিকা নেননি এবং নিজেদের হলিডে উদযাপনের জন্য সময় বুঝে করোনা ভাইরাস দ্বারা স্বেচ্ছায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তারা বলছেন, যেহেতু একবার করোনা আক্রান্ত হলে সহসা আবারও সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কম, তাই তারা জেনে বুঝেই করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন। তারা জানান, ভাইরাসে সংক্রমিত হবার পর তাদের দেহে প্রত্যাশিত সমস্যা দেখা গিয়েছিলো।
তবে এসবের বিপরীত চিত্রও আছে। স্বেচ্ছায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে গিয়ে বিপদেও পড়েছেন কেউ কেউ। সাংহাইয়ের এক তরুণী জানিয়েছেন, তার সেরে উঠতে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। হাসপাতালেও ভর্তিও হতে হয়েছিলো।
চীনা কর্তৃপক্ষ লকডাউন ব্যবস্থা তুলে নেয়ায় দেশটির নাগরিকরা খুশি। কারণ, তাদের ভাষায় আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা গেছে। দোকানে ও রেস্তোরাতে যাওয়া যাচ্ছে, এমনকি বিদেশ ভ্রমণের জন্য ভিসার পেতে লাইনেও দাঁড়াতে পারছে।
একাত্তর/এআর