জ্বালানির অভাবে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সাইকেল চালিয়ে গাজার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে জরুরি চিকিৎসা দিচ্ছেন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার চিকিৎসকরা। খুবই প্রয়োজনীয় ওষুধসহ অবশিষ্ট থাকা চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করছেন তারা। তবে বোমা হামলায় ভেঙে যাওয়ায় সাইকেলগুলোও চালানোর উপযোগী নেই।
৫৪ বছর বয়সী হাসান জাইন আল দীন গাজার একজন চিকিৎসক। অন্য প্রায় সবার মতো তারও গাড়ির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন হয়। কিন্তু ইসরাইলের অবরোধের কারণে জ্বালানির যোগান দেয়ার কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন রোগীদের চিকিৎসা করতে।
হাসান জাইন বলেন, ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেক মানুষ জাতিসংঘের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত অনেকেই তাদের ওষুধ ধ্বংসস্তূপের ভেতরেই ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে তাদের চিকিৎসা দেই। জ্বালানি না থাকায় আমার গাড়িটা অচল হয়ে আছ। তাই সাইকেল কিনেছি।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষই বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপের নিচে ওষুধপত্র ফেলে এসেছে। আমরা স্কুলগুলোতে গিয়ে তাদের চেকআপ করছি এবং খোঁজখবর রাখছি। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।
রোগীদের চেক-আপের জন্য সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় এই চিকিৎসককে। যা মোটেই সহজ কাজ নয়। ভবনের ধ্বংসস্তূপ পড়ে অনেক জায়গার রাস্তাই বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব স্থানে কাঁধে বয়ে বেড়াতে হয় তার সাইকেলটি।
তিনি জানান, বোমা হামলায় গাজার রাস্তাঘাট ভেঙে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে। তাই সাইকেল চালিয়েও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জাইন আরও বলেন, মাঝে মাঝে বাইরে বোমা বিস্ফোরণ চলতে থাকে। তখন আমরা বের হতে পারি না। হামলায় রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। মাঝে মাঝে সাইকেল কাঁধে নিয়েও অনেকটা রাস্তা হেঁটে যেতে হচ্ছে।
ইসরাইলের চলমান অভিযানে গাজার উপত্যকায় খাবার, পানি, জ্বালানি, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ জীবনধারণের জন্য মৌলিক সব উপাদানের ভয়াবহ অভাব তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় গাজার সব চিকিৎসককে রোগীদের সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান হাসান জাইন আল দীন।
তিনি বলেন, গাজার সব চিকিৎসকই চাইলে এভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারেন। তারা জ্বালানি, পানি, বিদ্যুৎ সব বন্ধ করে দিলেও আমাদের এই চেষ্টা তো আর ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সবাই মিলে সহযোগিতায় এগিয়ে এলে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসক আল দীন।
একাত্তর/এসি