মাত্র কয়েকদিন আগেই ইসরাইলি হানাদাররা হত্যা করেছিলো ছেলে, বোনসহ দশ স্বজনকে। হারিয়েছেন আরও কতশত কাছের মানুষ। তারপরও মাতৃভূমির স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে একচুল সরেননি তিনি। দুর্বীনিত শপথে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রাণপণে লড়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত সেই পুরনো ঘাতকের হাতেই প্রাণ দিতে হলো হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে।
ইরানে এক হামলায় ইসমাইল হানিয়া নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে হামাস। হামাস জানায়, আমাদের ভাই, নেতা, মুজাহিদ ইসমাইল হানিয়া, আন্দোলনের প্রধান তেহরানে তার সদর দপ্তরে ইহুদিবাদী আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন। তিনি ইরানের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা যে ভবনে অবস্থান করছিলেন তাতে হামলা চালানো হলে হানিয়া এবং তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। হামলার কারণটি তদন্তাধীন এবং শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীও হামাসের এ শীর্ষ নেতার নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বুধবার সকালে ইসমাইল হানিয়ার নিহত হওয়ার খবর প্রচার করে। টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, রাজধানী তেহরানে হামলায় ইসমাইল হানিয়ার দেহরক্ষীদের একজনও নিহত হন।
ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও তাঁকেই এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা মনে করা হয়। ৫৮ বছর বয়সী হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ডানহাত ছিলেন। আহমেদ ইয়াসিন ২০০৪ সালে একটি ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। এক বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসমাইল হানিয়া গাজায় ফেরেন।
হানিয়া গাজা, ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং প্রবাসে হামাসের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত দুই বছর ধরে তিনি তুরস্ক ও কাতারে বিভিন্ন সময় থেকেছেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান তিনি। এতে হামাসে তার পদমর্যাদা বাড়ে।
ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
হামাস সরাসরি ইসমাইল হানিয়ার খুনের জন্য ইসরাইলের দিকে আঙুল তুলেছে। এর আগেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকমী বিভিন্ন নেতাকে হত্যা করেছে ইসরাইলী গোয়েন্দারা। ইসরাইল হানিয় হত্যার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই বৈরুতে বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শোকরকে হত্যা করেছে ইসরাইল।