ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এভাবেই নতুন প্রেসিডেন্টকে সাথে নিয়ে উদযাপন করেছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। কিন্তু এটিই যে তার শেষ উদযাপন ছিলো কে জানতো?
তেহরানের বাসভবনে বিধ্বংসী হামলায় পরা পারে পাড়ি জমিয়েছেন হামাসের শক্তিশালী এই নেতা। ইসরাইলকে দায়ী করছে হামাস। ফিলিস্তিনিদের জন্যে জীবনভর লড়াই করে যাওয়া এই বীরের আছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধানের পদে থাকলেও মূলত তাকেই এই সংগঠনের শীর্ষ নেতা হিসেবে মনে করে বিশ্ব।
গত শতকের আশির দশকে হামাসের উত্থানের সময় ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিমদের রাজনৈতিক ও সামরিক আন্দোলনের সামনের কাতারে ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৯ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল ইসরাইল।
এরপর ১৯৯২ সালে আরও কয়েকজন হামাস নেতার সঙ্গে হানিয়াকে ইসরাইল ও লেবানন সীমান্তের শূন্যরেখায় ছেড়ে দেয় ইসরাইল। এক বছর নির্বাসনে থাকার পর ইসমাইল হানিয়া গাজায় ফেরেন। ১৯৯৭ সালে হামাসের মতাদর্শিক গুরুর কার্যালয়ের প্রধানের দায়িত্ব পান হানিয়া। এতে করে হামাসে বেড়ে যায় তার পদমর্যাদা।
ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচনে হামাস বেশির ভাগ আসনে জয় পাওয়ার পর ২০০৬ সালে ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ সরিয়ে দেওয়া হয় হানিয়াকে।
যদিও সেই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেন হানিয়া। তিনি বলেন, তার সরকার ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের জাতীয় দায়িত্ব থেকে সরবে না এবং তিনি গাজা শাসন করতে থাকেন।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন ইসমাইল হানিয়া। পরের বছর ইসমাইল হানিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। কয়েক বছর ধরে কাতারে বসবাস করে আসছিলেন ইসমাইল হানিয়া।
১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৪৮ আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তার বাবা-মা বর্তমান ইসরায়েলের অন্তর্গত আসকালানের কাছের বাড়ি থেকে উদ্বাস্তু হন। জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়ে হামাসে যোগ দেন ইসমাইল হানিয়া। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হামাসের পক্ষে লড়াই করে গেছেন এই বীর।