ফিলিস্তিনের ভূমিতে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইসরাইল এখন মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সবচেয়ে বড় অশান্তির কারণ। পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসনে অস্থির আরব ভূখণ্ড। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন- হামাসকে শায়েস্তা করতে নেমে এখন প্রতিদিন ইসরাইলি হায়েনাদের হাতে মারা পড়ছে শত শত মানুষ। গোটা আরব বিশ্বকেই যেন এখন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে দেশটি।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাতেই দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালিয়ে বিপ্লবী গার্ডের জেনারেলদের হত্যা করেছে ইসরাইল। এতে ফুঁসে উঠেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। আর ইসরাইলের জন্য যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল- ইরানও হুংকার ছেড়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামলার মোক্ষম জবাব হিসাবে তেহরানের প্রতিক্রিয়া হবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক।
ইরানের এমন প্রতিক্রিয়ার হাঁটুতে কাঁপন ধরে যায় তেল আবিবের, রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় নেতানিয়াহুর। শুধু তার নয়, দীর্ঘদিনের দোসর আমেরিকাও সমানভাবে শঙ্কিত।
ইসরাইলি নেতা নেতানিয়াহু মুখে বলেছেন, যারাই তাদের ক্ষতি করছে বা ক্ষতি করার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল তাদের ক্ষতি করবে। কিন্তু তার এ কথা অসাড় হয়ে পড়ে একদিন পরই। ইসরাইলের পরিস্থিতি এখন এমন যেন, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা!
ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার হুমকির মুখে ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী তাদের যুদ্ধ ইউনিটগুলোর সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে। শুধু কি তাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দূতাবাসগুলো খালি করতে শুরু করেছে ইসরাইল। এরইমধ্যে কমপক্ষে ২৮টি দূতাবাস বা কনস্যুলেট অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রয়টার্স ও বিবিসি জানিয়েছে, ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলে জিপিএস সিস্টেম বিঘ্ন হতে দেখা গেছে। এই সিস্টেমের ওপর নির্ভর করেই বিভিন্ন দূরপাল্লার অস্ত্রের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ঠিক করা হয়। তাই শত্রুর সম্ভাব্য গাইডেড মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্রকে বিভ্রান্ত করতে সম্ভবত এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে ইসরাইল এ কাজ করেছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ ও গণমাধ্যমগুলো।
ইসারাইলি ডিফেন্স ফোর্সেসের মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি নিশ্চিত করেছেন, ইসরাইলের ভেতরে জিপিএস ব্লক করা হয়েছে। ইসরাইলিদের আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যাতে তাদের মোবাইল ফোনের অ্যাপে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জিপিএস সেট করে। পাশাপাশি দেশটির জনগণকে ভীত হয়ে বাজার থেকে বেশি জিনিসপত্র ক্রয় না করারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ইসরাইলে যখন এমন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা তখন অন্যদিকে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কায় শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সমন্বয়কারী জন কিরবি সিএনএন’কে বলেছেন, তারা পুরো ঘটনায় বেশ শঙ্কিত। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা সম্পর্কে টিভি উপস্থাপকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমর খুব উদ্বিগ্ন।
এদিকে, শুক্রবার সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাস প্রাঙ্গণে নিহত সাত সেনা কর্মকর্তাদের দাফন অনুষ্ঠানে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছে ইরান। দাফন অনুষ্ঠান বার্ষিক কুদস দিবসে আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ শুক্রবার ইরানজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দিবসটি পালন করে ইরান।