গণ গ্রেপ্তারে বন্ধ হচ্ছে না আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতিতে সামলাতে এরিমধ্যে শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের এমারসন কলেজ থেকে প্রায় ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসেও বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তার শুরু গত সপ্তাহে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন মার্কিন স্পিকার মাইক জনসন।
ইসরাইল বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) তার প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ১০ মে এটি হওয়ার কথা ছিল।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদকারীদের একটি ছাউনি পুলিশ ভেঙে দেয় এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। এমন পরিস্থিতিতে বাতিল করা হয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান। নিরাপত্তা বাতিল করা হয় মুসলিম শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুমের ভাষণ।
আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা স্থান ছাড়তে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইমোরি ইউনিভার্সিটির প্রতিবাদকারীরা জানান, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের বিক্ষোভ আয়োজন করছে।
এছাড়া আটলান্টায় পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠারও প্রতিবাদ জানায় তারা। শহরটিকে ‘পুলিশ নগরী’ হিসেবে গড়ে তোলারও প্রতিবাদ জানানো হয় বিক্ষোভে। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা বলেন, তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছেন। আটলান্টায় পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিষয়েও তাদের আপত্তি আছে।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে ইউএসসি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন বিক্ষোভে উত্তাল। এসব বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনেক শিক্ষকও। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অদূরে।
কানেটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী ও আইনের শিক্ষার্থী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েলের গণহত্যায় অর্থায়ন ও তাদের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে চলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তারা হতাশ।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলা বিক্ষোভ নিয়ে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন, তারা কলাম্বিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিরাপদ বোধ করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্য ইহুদি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলায় হামাসের বন্দুকধারীরা প্রায় এক হাজার ২০০ লোককে হত্যা করে এবং আরও ২৫৩ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে আসে। এর প্রতিশোধ নিতে ইসরাইল গাজায় অবিরাম বোমা বর্ষণ ও স্থল অভিযান শুরু করে। যার ফলে মারা যায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যার অধিকাংশই নিরীহ নারী ও শিশু।