ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের বিজয়ে দেশ, অঞ্চল ও বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে তিনি নিজ দেশের সব পক্ষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের নীতি বাস্তবায়নেরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন পেজেশকিয়ানকে ঘরে-বাইরে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ইরানের দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। সংস্কারপন্থী এই প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হওয়ায় দেশটির অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নতুন এই প্রেসিডেন্টের সামনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে দেশের সব নাগরিককে নিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন পেজেশকিয়ান।
পেজেশকিয়ানের রাজনৈতিক ও নীতিগত অবস্থান ইব্রাহিম রাইসির বিপরীত। রাইসি ইরানে নারীদের সীমিত অধিকার তৈরি এবং পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে মাসুদ পেজেশকিয়ান শুনিয়েছেন অর্থনৈতিক সংকট এবং দমন-নিপীড়নে ক্লান্ত ইরানি জনগণের সংস্কারের কথা। তবে, সেটি বাস্তবায়ন করা তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দেশে বিদ্যমান কিছু কঠোর আইন, যেমন, বাধ্যতামূলক পর্দা, হিজাবের মতো জিনিসগুলোকে নতুন প্রেসিডেন্ট ফিরিয়ে দিতে পারবেন কিনা তা সময় বলে দেবে । তবে তিনি একটি ব্যাপর পরিষ্কার করে বলেছেন যে, তিনি সর্বোচ্চ নেতার দ্বারা নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যেই থাকবেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়ে যাচ্ছে ইরান। সেই সঙ্গে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া হবে পেজেশকিয়ানের নেতৃত্বাধীন সরকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এছাড়া, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের ইসরাইলবিরোধী ভূমিকা কেমন হবে, সে বিষয়টিও দেশটির নতুন নেতৃত্বকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে ইরানের। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এ সম্পর্ক পেজেশকিয়ানের শাসনামলে আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইব্রাহিম রাইসি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির খুবই অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। খামেনির নির্দেশনা মেনে একই মতাদর্শ ধরে রেখে কাজ করে যাওয়া পেজেশকিয়ানের জন্য কঠিন হবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।
নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে ইরানের নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন পেজেশকিয়ান। ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষমতা বুঝে পাবেন তিনি। সোমবার জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইরানের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আপনাদের সাহচর্য, সহানুভূতি ও আস্থা ছাড়া সামনের কঠিন পথটি মসৃণ হবে না। আমি আপনাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম।