ঘুমিয়ে পড়া, ভুলে যাওয়া ও উল্টোপাল্টা বলাসহ নানা কারণেই আলোচিত ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরও গো ধরেছিলেন আসছে নির্বাচনে প্রার্থী হবার। দলের টিকেটও পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে নেমেই লেজেগোবরে করে ফেলেন বাইডেন।
সমালোচনা আর দলীয় চাপে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ৮২ বছরের বুড়ো বাইডেন। দৃশ্যপটে আসেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। মার্কিন মুলুকে নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে দেশটিতে চলছে চার দেশের জোট ‘কোয়াড’ সম্মেলন। এতে যোগ দিচ্ছেন চার বড় দেশের কর্তারা।
এই কোয়াড সম্মেলনে জো বাইডেনের আচরণ এই ভাইরাল। নেটদুনিয়ায় চলছে তুমুল চর্চা। ভুলে যাওয়া রোগ বাইডেনের পুরনো। এমন পরিচয় আগেও দিয়েছেন তিনি। এবার মঞ্চে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীর কথা ভুলে গেলেন জো বাইডেন! নাম ঘোষণা করতে গিয়ে বলে বসলেন, ‘কে যেন মঞ্চে আসবেন?’
সেই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়। তিনদিনের জন্য আমেরিকা সফরে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে কোয়াডের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তার পর ক্যানসার দূরীকরণের একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মোদী। সেখানেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা একেবারেই ভুলে যান বাইডেন।
রোববার সকালে ডেলওয়ারে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন কোয়াডের চার রাষ্ট্রনেতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন নরেন্দ্র মোদীও। ‘ক্যানসার মুনশট ইনিশিয়েটিভ’ নামে এক প্রকল্পের উদ্বোধন হয় এদিন।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্যানসার প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজ করবে এই প্রকল্প। অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার পরেই ছিলো তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পালা। সেখানেই আচমকা সব ভুলে যান বাইডেন। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকেন।
এরপরই বাইডেন হঠাৎ করে বলে বসলেন, এবার যেন কার নাম বলব? কে যেন আসবেন? মাইক্রোফোন অন থাকায় সবাই শুনতেও পান। তাছাড়া অনুষ্ঠানটি সারাসরি সম্প্রচারও হচ্ছিলো। ফলে, বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মনে করিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদীর নাম। তখন উঠে এসে বাইডেনের সঙ্গে করমর্দন করেন মোদী।
এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে আরও কাণ্ড ঘটিয়ে বাইডেন। অনুষ্ঠান চলার সময় তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে সতর্ক করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন আমাদের পরীক্ষা করছে। সে সময় তার মাইক অন থাকায় সে মন্তব্য শুনতে পান অনুষ্ঠানে আগত সব অন্যান্য অতিথি ও কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যমেও তা রেকর্ড হয়।
সেখানেই শেষ নয়। মাইক অন থাকা অবস্থাতেই জো বাইডেন গড়গড় করে বলে চলেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কূটনৈতিক সুযোগ খুঁজছেন। আমার মনে হয়, এতে ওদের কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রসহ একাধিক ফ্রন্টে চীন আমাদের উপর নজর রাখছে।
পরে এই ঘটনা নিয়ে হোয়াইট হাউস বলেছে, বাইডেনের মন্তব্য নিয়ে হইচই করার কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। এতে অবাক হবার কিছু নেই। কারণ আমাদের মনে ভেতর যা, বাইরেও তা। কোয়াড বৈঠকে শুধু চীনকে নিয়েই কথা হয়েছে তেমনটা নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়বস্তুও ছিলো।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ইউক্রেনের নাগরিকদের ইরানি বলে অভিহিত করা কিংবা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ‘ভ্লাদিমির’ বলা অথবা প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনাকের নাম গুলিয়ে ফেলার মতো ঘটনা তাঁকে বার বার ঘটাতে দেখা গিয়েছে। ফলে ৮২ বছরের বাইডেনের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।