নিজেদের মাটিতে হিজবুল্লাহ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার প্রমাণ পেয়ে গেছে ইসরাইল। গাজায় এক বছর ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে গেল সপ্তাহে লেবাননে হামলা চালায় তেল আবিব। তবে এক সপ্তাহ পরও লেবাননের সীমান্তের ভেতর এক ইঞ্চি পরিমাণও এগোতে পারেনি ইসরাইলি সেনারা। উল্টো হিজবুল্লাহর প্রবল আক্রমণের মুখে জেরবার হয়ে গেছে বাহিনীটি।
কোণঠাসা এই পরিস্থিতিতেই লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে আল রিদওয়ান বাহিনীকে মোতায়েনের ঘোষণা দিল হিজবুল্লাহ। অত্যাধুনিক সব ধরনের যুদ্ধাস্ত্র আর কমান্ডো মিশনে অদ্বিতীয় বাহিনীটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যোদ্ধাদেরও হার মানাতে সক্ষম। ইসরাইলকে এবার চরম শিক্ষা দিতে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ঝাপিয়ে পড়বে আল রিদওয়ানের সেনারা।
চলতি মাসেই বিপুল সংখ্যক সেনা, ট্যাঙ্কের বহর আর গোলাবারুদ নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে হিজবুল্লাহকে নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে দেশটি। তবে প্রথমদিনের অভিযানেই মোতায়েন করা প্রায় সব ইসরাইলি সেনার মরদেহ কফিনবন্দি হয়ে ফেরত এসেছে তেল আবিবে। বাকিরা ফেরত এসেছে অ্যাম্বুলেন্সে করে আশঙ্কাজনক অবস্থায়।
একের পর এক ব্যাটেলিয়নের এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে ইসরাইলি সেনাদের মনোবল যখন ভেঙে পড়েছে তখনই সীমান্তে আল রিদওয়ান বাহিনীকে মোতায়েনের ঘোষণা দিল হিজবুল্লাহ। যে বাহিনীর নামকেই যমের মতো ভয় পায় দখলদার বাহিনীর সেনারা। ইসরাইলি বাহিনী ভালো ভাবেই জানে, হিজবুল্লাহর এই বাহিনীটির মুখোমুখি হলে জীবিত ফেরার কোন আশা নেই।
হিজবুল্লাহর বিশেষায়িত আল রিদওয়ান ইউনিটের সেনারা যুদ্ধে নিজেদের পারদর্শিতা ও দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। শত্রুদের আঘাত শুধু ঠেকানোই নয় বরং এই বাহিনীর যোদ্ধাদের আক্রমণও নির্ভুল। কৌশল ও আক্রমণে অব্যর্থ বাহিনীটির মূল কাজই হলো ইসরাইলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে কমান্ডো অভিযান চালানো। শত্রুর ঘরে দ্রুত প্রবেশ করে চূড়ান্ত আঘাত হেনে আবারও নিজ অবস্থানে ফিরতে পারে তারা।
এর আগেও আল রিদওয়ান বাহিনীর ইসরাইলে বেশ কিছু দুঃসাহসিক অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ। ২০২৩ সালে লেবানন সীমান্তে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর বেশ কিছু ঘাঁটিতে একযোগ হামলা করে বাহিনীটি। অতর্কিত আক্রমণে মূহুর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ইসরাইলি বাহিনীর সব সেনা।
চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যুদ্ধের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে আল রিদওয়ান বাহিনী। নিজেদের স্নাইপার ইউনিটটি অব্যর্থ নিশানায় যে কোন দূরত্বে নির্ভূলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
হিজবুল্লাহর সবচেয়ে সামর্থ্যবান, শক্তিশালী যোদ্ধারাই এই বাহিনীর অংশ। দলটির হয়ে সবচেয়ে গোপন, বিপদজনক ও স্পর্শকাতর মিশনগুলোতে পাঠানো হয় এই সেনাদের। প্রায় আড়াই হাজার যোদ্ধাকে বছরের পর বছর কঠোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডের এলিট শাখা সাবেরিন কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান থেকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয় হিজবুল্লাহর এই বাহিনীটিকে। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের হয়ে সফলভাবে যুদ্ধ করেছে আল রিদওয়ান বাহিনী। সেখানে আরব বিশ্বের অন্য সেনাদের পাশাপাশি রুশ সেনাদের সাথেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছে আল রিদওয়ানের সেনারা।
কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে আল রিদওয়ান বাহিনীতে সেনাদের নিয়োগ দেয়া হয়। স্নাইপিং, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক যুদ্ধাস্ত্র চালনা, বিস্ফোরক তৈরিসহ উচ্চ পর্যায়ের ও স্পর্শকাতর সাইবার যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের। শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়লে পরিস্থিতি এড়ানোর আগ্রাম প্রস্তুতি থাকে যোদ্ধাদের।
পার্বত্য ভূমিতে শব্দের মতোই দ্রুতবেগে চলাফেরা করতে পারদর্শী এসব যোদ্ধা। পশ্চিমা থেকে শুরু করে রুশ অত্যাধুনিক অস্ত্র চালানোতেও পারদর্শী তারা। স্পর্শকাতর সাইবার যন্ত্রও রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।
৯০ এর দশক থেকেই ইসরাইলি বাহিনীকে দমনের জন্য রিদওয়ান বাহিনীটির প্রতিষ্ঠা করে হিজবুল্লাহ। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে নিজেদের উপস্থিতির জানান দেয় তারা। ২০২৩ সালে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলি বাহিনীকে ঠেকাতে সিরিয়া ইসরাইল সীমান্তে মোতায়েন করা হয় রিদওয়ান বাহিনীকে। সেখানেই একের পর এক আক্রমণে তেল আবিবের ঘুম কেড়ে নেয় বাহিনীটি।
রিদওয়ান বাহিনীকে নিজেদের সীমানা থেকে বিতাড়িত করতে একের পর এক অপারেশন চালালেও তাতে ইসরাইলি বাহিনীই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এমনকি লেবাননে এবারের স্থল অভিযান শুরুর কারণও যেকোন উপায়ে রিদওয়ান বাহিনীকে দমন করা বলেই জানিয়েছে বেশ কিছু গণমাধ্যম।
ইসরাইল সরকার আল রিদওয়ান বাহিনীকে নিয়ে যে চরম আতঙ্কে থাকে তা জানিয়েছে তেল আবিবের বেশ কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাও।