আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুর। সহিংসতার প্রেক্ষাপটে পাঁচ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাত জেলায়। রাজ্যজুড়েই টানটান উত্তেজনা আর অশান্তির আবহ। কোথাও কোথাও জারি করা হয়েছে কারফিউ।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর রাজ্যে চলমান সহিংসতার কারণে রোববার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত পূর্ব এবং পশ্চিম ইম্ফলে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বত্র কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ইম্ফল পূর্ব এবং পশ্চিম-সহ সাতটা জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করা হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্যের নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বাসায় একদল বিক্ষোভকারী প্রবেশের চেষ্টা করলে রাজ্যে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
মণিপুরের জিরিবামে মেইতেই গোষ্ঠীর নারী ও শিশু মিলিয়ে ছয়জনকে অপহরণ ও তারপর দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। ক্ষুব্ধ জনতা মনিপুরের রাজধানী ইম্ফালের কয়েক জায়গায় বিক্ষোভ করে। এসময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী।
জিরিবামের বরাক নদী থেকে আট মাসের শিশুসহ ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে ১০ জন সশস্ত্র কুকি বিদ্রোহী নিহত হয়।
ওই রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রোববার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। তারপর সোমবার জানানো হয়েছে, রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থা বা এনআইএ মণিপুরের সাম্প্রতিক তিন ঘটনার তদন্ত করবে যাকে কেন্দ্র করে আবার উত্তপ্ত হয়েছে ওই রাজ্য।
সোমবার সকালেও থমথমে পরিবেশ রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম ইম্ফলসহ একাধিক জেলায়। রাজ্য সরকার ইম্ফাল পূর্ব, ইম্ফাল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, থৌবল এবং কাখচিংসহ পাঁচটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ সাত জেলায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
এর আগে, শনিবার বিক্ষোভকারীরা তিন রাজ্য মন্ত্রী ও ছয় বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলার লক্ষ্য ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর জামাই, বিজেপি বিধায়ক আরকে ইমো সিংহ। বিক্ষোভকারীরা তার বাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়। একই ধরনের হামলা হয় মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মন্ত্রী ইয় কেমচন্দ ও কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী এল সুসিন্দ্রো সিংহের বাড়িতেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সপাম রঞ্জনের বাসভবনও অবরুদ্ধ করা হয়। লামফেল সানাকেইথেল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক প্রতিনিধি জানান, রঞ্জন প্রতিবাদকারীদের মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাদের দাবি উত্থাপনের আশ্বাস দেন। সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন ন্যাশানাল পিপলস পার্টি। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বিজেপির ন্যাশানাল প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডাকে চিঠিতে মণিপুরের অবস্থার কথা জানিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, এন বীরেন সিংয়ের সরকার তার রাজ্যের (মণিপুরের) পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।