২০২৫ সালে পাঁচ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে চীন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বুধবার দেশটির জাতীয় পার্লামেন্টে তার প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। টানা তৃতীয় বছরের মতো চীন একই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরে রাখলেও, এবার তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাস্তবে এই লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করা খুব সহজ নয়। কারণ সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ, ভূরাজনৈতিক প্রতিকূলতাসহ, গত কয়েক বছর ধরে নানা সমস্যার মুখোমুখি চীন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। চীনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। চীন এই পদক্ষেপকে স্বাভাবিকভাবেই ভালো চোখে দেখেনি। কারণ ট্রাম্প এমন সময় এই ঘোষণা দিয়েছেন যখন দেশের ভেতরে চীনের জিডিপি ক্রমশ কমছে। বাজারে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড-আইএমএফ বলছে, ২০২৫ সালে চীনের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে চার দশমিক ছয় শতাংশ। পাঁচ শতাংশে তা টেনে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এক কথা মানছে না। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা পাঁচ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। আইনসভার বার্ষিক অধিবেশনেও বিষয়টিকে পরিস্কার জানিয়ে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
তিনি বলেন, ২০২৫ সালের জন্য জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া শহুরে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরে ১ কোটি ২০ লাখ বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের আয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদান সুষম ভারসাম্য রক্ষা করা হবে।।
২০২৫ সালে সামরিক খাতেও বাজেট সাত দশমিক দুই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সবমিলিয়ে এখাতে এক যুগে বাজেট হয়েছে দ্বিগুণ। কারণ এক চীন নীতিতে অবিচল থেকে তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরোধিতা করবে বেইজিং। একইসাথে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে, বৈশ্বিক উচ্চমানের মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হবে। শান্তিপূর্ণ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মেনে, আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষায় কাজ করবে বেইজিং।
ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন করে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের একদিন পর। এই পদক্ষেপ চীনের রপ্তানি খাতকে সংকটে ফেলতে পারে, যা গত বছর দেশের মোট প্রবৃদ্ধির প্রায় এক-তৃতীয়াংশে অবদান রেখেছিল। এরই মধ্যে বেইজিং আরও কিছু সংকটের মুখোমুখি—দেশটি ১৯৬০-এর দশকের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মূল্যহ্রাসের (ডিফ্লেশন) পথে রয়েছে, আর সম্পত্তি খাতের মন্দা এখনো তলানিতে পৌঁছায়নি।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তার নীতিনির্ধারকদের ডিসেম্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরও আগ্রাসী প্রণোদনা গ্রহণ করতে হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই পরিকল্পনায় আরও বেশি সরকারি ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যার একটি অংশ অন্তত দুর্বল ভোক্তা ব্যয় চাঙা করতে ব্যবহার করা দরকার।
মূল্যহ্রাসের চাপ স্বীকার করে সরকার ভোক্তা মূল্যস্ফীতির (সিপিআই) লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে প্রায় ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন। অতীতে এই লক্ষ্যকে সাধারণত সর্বোচ্চ সীমা হিসেবে দেখা হতো, কিন্তু এবার এটি কমানো হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, নীতিনির্ধারকেরা দ্রুত মূল্যবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
গত দুই বছরে চীনে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অর্থনীতিবিদ এখন চাইছেন, সরকার এই লক্ষ্যমাত্রাকে নীতিনির্ধারণী কাঠামোর জন্য একটি বাধ্যতামূলক লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করুক। এছাড়া, পরিবেশ সুরক্ষা ও সবুজ রূপান্তরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে, কার্বন নিরপেক্ষতা প্রচার, শূন্য-কার্বন পার্ক ও কারখানা স্থাপনসহ একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে চীন।