ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন দেশের ইন্টেলিজেন্স প্রধান ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সম্মেলন হচ্ছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত নানা দিকে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্যই এই আয়োজন। রোববার এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড।
নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে এসেই বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বড় বার্তা দিয়েছেন তুলসী। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে এনিয়ে তিনি রীতিমতো তোপ দাগিয়েছেন। বলেছেন, বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা উগ্র ও চরমপন্থা নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ মাথাব্যাথা রয়েছে।
তুলসী গ্যাবার্ডকে আমেরিকার ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পদে বসিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি প্রথমে ছিলেন ডেমোক্র্যাট, পরে দল বদলে যোগ দেন রিপাবলিকান পার্টিতে ট্রাম্পের শিবিরে। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও দায়িত্ব সামলেছেন একাধিকবার।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার সাবেক সেনা কর্মকর্তা তুলসী গ্যাবার্ড বারবার আলোচিত হয়েছেন মূলত দুই কারণে। একদিকে তাঁর রাজনৈতিক মন্তব্য এবং অন্য দিকে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভে শপথ নেয়ার সময়ে ‘ভগবত গীতা’ হাতে ছিল তাঁর। ভারতে এসেও তাঁর মুখে উঠে এসেছে গীতার প্রসঙ্গ।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলসী জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে কিভাবে গীতা শিক্ষা তাঁকে পথ দেখিয়েছে। তিনি বলছেন, বিশ্বের নানা এলাকায় যুদ্ধক্ষেত্রে কাটানোর সময়ে হোক কিংবা অন্যত্র কোনও চ্যালেঞ্জের সময়ে, গীতায় অর্জুনকে দেয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা আমার পথ দেখিয়েছে। ভাল সময়েও, খারাপ সময়েও। এই বাণী আমায় শক্তি দেয়, আমায় শান্তি দেয়।
আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হওয়া প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী তুলসী গ্যাবার্ড। এর আগে বারবার নানা প্রসঙ্গে ‘ভগবত গীতার’ প্রসঙ্গ তুলে এনেছিলেন। ২০২০ সালে একটি বক্তৃতায় পড়ুয়াদের গীতায় উল্লেখ করা ভক্তিযোগ এবং কর্মযোগ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এছাড়া সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, প্রথম মেয়াদে তো বটেই, তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে হারানোর চেষ্টা করছেন। ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে আমেরিকাবাসী। প্রভাব পড়ছে ভারতে, বাংলাদেশে, সিরিয়া, ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশে।
আর এনডিটিভি-কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে আলাদা করে বাংলাদেশের বিষয় উঠে এসেছে তাঁর মুখে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আমেরিকার ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স তুলসী গ্যাবার্ড জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রশাসন কথা বলতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যদের দীর্ঘদিন ধরে হত্যা এবং লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে। এটা আমেরিকার সরকারের মাথাব্যথার কারণ।
ইসলামি খেলাফতের ধারণা থেকেই বিশ্বে নানা ইসলামি সন্ত্রাসিরা নাশকতামূলক কাজকর্ম করছে বলে তাঁর মত। তিনি বলছেন, এর ফলে অন্য ধর্মের মানুষের উপর প্রভাব পড়ে। ওরা হিংসার মাধ্যমে নিজের মতবাদ অনুযায়ী কাজ করতে যান। এই বিষয়টি রুখতে ট্রাম্প প্রশাসন কাজ করছে বলে দাবি গ্যাবার্ডের।