অবশেষে অপেক্ষার অবসান। ২৮৬ দিন পর নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোরসহ চার নভোচারী। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের উপকূলে অবতরণ করেছে তাদের বহনকারী ক্যাপসুলটি। নভোচারীরা সবাই সুস্থ আছেন। তবে কয়েক সপ্তাহ তাদের থাকতে হবে নাসার ক্রু কোয়ার্টারে। গোটা সফর শেষ করতে সময় লেগেছে ১৭ ঘণ্টা।
প্রতীক্ষায় ছিলো পুরো বিশ্ব। শঙ্কা ছিলো ঠিকমতো পৃথিবীতে ফিরতে পারবে তো স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্রু নামের মহাকাশযানটি। তবে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২৮৬ দিন পর নিরাপদে পৃথিবীর আলো বাতাসে ফিরলেন সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর। গিয়েছিলেন আট দিনের জন্য। কিন্তু কাটাতে হয়েছে ন’মাস।
মহাকাশযান ড্রাগন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর মেলে প্যারাস্যুট। তার পর ধীরে ধীরে সেটি নেমে আসে আমেরিকার ফ্লোরিডার কাছাকাছি সমুদ্রে। সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত রাখা মার্কিন নৌবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী জাহাজে তুলে নেওয়া হয় সুনীতা এবং বুচকে। ইলন মাস্ক তার এক্স অ্যাকাউন্টে ক্যাপসুলটির অবতরণের দৃশ্য শেয়ার করেছেন।
ফ্লোরিডার উপকূলে নেমে আসার পর কিছুক্ষণ সমুদ্রে ভাসছিল তাদের বহনকারী ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, ক্যাপসুলটিকে ঘিরে সাঁতার কাটছে কিছু কৌতূহলী ডলফিন। প্রায় এক ঘণ্টা পর মার্কিন নৌবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী জাহাজ এই নভোচারীদের ক্যাপসুল থেকে বের করে নিয়ে আসে।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে যেন তারা খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, মূলত সেজন্য এক ঘণ্টা সময় নিয়েছে নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ। ফ্লোরিডার উপকূল থেকে এই নভোচারীদের সঙ্গে নিয়ে টেক্সাসের হিউস্টন শহরে জনসন স্পেস সেন্টারের উদ্দেশে রওনা দেন উদ্ধারকারীরা।
মাথা ফুলেছে আগের তুলনায়, পা খানিক সরু হয়েছে। ন’মাস মহাকাশে কাটানোর পর পৃথিবীতে ফেরার পর সুনীতা উইলিয়ামস এবং তার সঙ্গী বুচ উইলমোরের শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবক্ষয় হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাঁরা সুস্থ আছেন। তবে এখনই নিজের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে যেতে পারছেন না তারা।
কয়েক সপ্তাহ তাদের থাকতে হবে নাসার ক্রু কোয়ার্টারে। সেখানে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তারপর চলবে নিবিড় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় নানা হেরফের ঘটে।
গত বছর জুনে বিমান প্রস্তুতকারী মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি নভোযান স্টারলাইনারে চেপে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন সুনীতা ও বুচ। কিন্তু যে মহাকাশযানে তারা গিয়েছিলেন, সেটিতে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেওয়ায় আটকা পড়েন তারা।
এমন অবস্থায় আটকে পড়া দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে গত বছর থেকেই নানা পরিকল্পনা করতে শুরু করে নাসা। গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে নাসার তৎপরতার অংশ হিসেবে ক্রু-১০ মিশনের ফ্লাইটে তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।