ভারতজুড়ে এপ্রিল মাসে রেকর্ড ভাঙা গরমে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মে মাসেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। এর মধ্যে দক্ষিণ রাজস্থান, পশ্চিম মধ্য প্রদেশ, মারাঠাওয়াড়া ও গুজরাটে মে মাসে পাঁচ থেকে আটটি অতি তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি তাপদাহ বয়ে যায়, যা ছিলো গত ১৫ বছরে সর্বাধিক। আরেক রাজ্যে ওডিশাতেও ছিলো তীব্র গরম। সেখানেও গত ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের পর এই প্রথম টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ দেখেছে ওডিশা।
মূলত কালবৈশাখীর দেখা না মেলাতেই তাপমাত্রা মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্ব এবং উত্তর পূর্ব ভারতে। কলকাতা এবং সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে রোজই পারদ চড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। এমনকি উত্তরবঙ্গেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে।
গরমকালে ঝড়বৃষ্টির জন্য বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প প্রয়োজন। এবার সেটা কম থাকায় শহরে ঝড়বৃষ্টি মিলছেই না। অন্য বছর এপ্রিলে যেখানে গড়ে তিন চারটি কালবৈশাখি মেলে, সেখানে এ বছর অকাল-কালবৈশাখীতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তাতেও কমেনি তাপমাত্রার পারদ।
গরম হাওয়া খুব বেশিক্ষণ থমকে থাকছে পরিবেশে। আগে গরম ও শীতল হাওয়ার অদলবদল হত। গরম হাওয়া ওপরে উঠে গেলে তার জায়গা নিত শীতল হাওয়া। কিন্তু এখন, গরম হাওয়াই আটকে পড়ছে পরিবেশে। যে কারণে পরিবেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে।
এর জন্য যত্রতত্র গাছ কাটা এবং বড় বড় দালানগুলো দায়ী। পরিবেশ থেকে গরম হাওয়া বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা চাই। তাকে চারদিক থেকে আটকে দিচ্ছে বড় বড় বাড়ি, ধাতব টাওয়ার, শপিং মল। এখন প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে তত বেশি ধাতুর ব্যবহার হচ্ছে। ফলে পরিবেশ শীতল হওয়ার সময়ই পাচ্ছে না। গরম বাড়ছে।
বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর চলতি মে মাসেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। কিছু কিছু রাজ্যে অতি তাপদাহ থাকত পারে বলেও আভাস দেয়া হয়েছে। তবে, আগামী দিনগুলোতে তাপপ্রবাহ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে।
পূর্ব-ভারতে এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯০১ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই ছিল সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা। এর জন্য অনেকগুলো কারণকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে প্রধান একটি কারণ হচ্ছে এল নিনো।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের মতে, এল নিনোর বছরে তাপমাত্রাও বেশি বেড়েছে। তাছাড়া, বজ্রঝড় কম হওয়া এবং ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলে অ্যান্টি-সাইক্লোনিক সারকুলেশনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসের পর এই প্রথম টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ দেখেছে ওডিশা। যা গোটা ভারতের মধ্যে সর্বাধিক। তাছাড়া, দক্ষিণ রাজস্থান, পশ্চিম মধ্য প্রদেশ, বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া এবং গুজরাটে মে মাসে পাঁচ থেকে আটটি অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালাতেও বিরল তাপপ্রবাহের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সেখানে অন্তত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রোদের তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে নদীর পানি। এপ্রিলের টানা প্রথম ২৬ দিন ভারতের একটি বড় ভৌগোলিক অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হয়।
ঠিক সেই সময়, ভারতের আরেক অংশে দেখা দিয়েছে ভারী বৃষ্টি ও তুষারপাত। জায়গাটি হলো ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর। খবর এনডিটিভির। গেলো মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরের সোনমার্গ এলাকায় ভারী বৃষ্টি ও তুষারপাতের জেরে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
একটি ভিডিওতে তুষারে ঢাকা পাহাড় বেয়ে কাদামাটির স্রোত নেমে আসতে দেখা গেছে। এ সময় এলাকাটি থেকে কিছু মানুষ ও গবাদি পশুকে ছুটে পালাতে দেখা যায়। ভারী বৃষ্টিতে জম্মু ও কাশ্মীরের আরও কয়েকটি স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
বৃষ্টির পর একাধিক ভূমিধসের কারণে মঙ্গলবার জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পিটিআই জানিয়েছে, কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সংযোগকারী একমাত্র সর্ব-আবহাওয়া মহাসড়ক এটি। রামবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধসের কারণে সড়কটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।