আকস্মিক এক ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ইব্রাহিম রাইসির ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বহরে থাকা তিনটি হেলিকপ্টারের মধ্যে দুটি নিরাপদে ফিরে এলেও রাইসির বহনকারী কপ্টার আগুনে ভস্ম হয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিয়ে এখন রহস্যের জাল বিস্তার হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় চলছে ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ আগ্রাসন। গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা ইরান থেকে সরাসরি সমর্থন পাচ্ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হিজবুল্লাহও পাচ্ছে ইরানের সমর্থন। এরি মধ্যে ইসরাইলে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় রাইসির সরকার।
সেই হামলার পরই ইরানকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইরানে হামলা চালানোর দাবিও করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, আরও প্রতিশোধ নেয়া হবে। তাই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ইরানের চিরশত্রু ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল থাকতে পারে, এমন সন্দেহ ছড়াচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী মিডিয়া ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিধ্বংসী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে ইসরাইলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেছে দেশটির কর্মকর্তারা।
যদিও রাইসির মৃত্যু নিয়ে ইসরাইল এখনো অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশ করেনি। তবে দেশটির কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে তেল আবিবের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে তারা বলেছেন, 'এই কাজ আমরা করিনি।’
ইরানি ও তুর্কি সংবাদ সংস্থার ড্রোন ফুটেজে প্রকাশ করা হয়েছে যে, হেলিকপ্টারটি জরুরি অবতরণ করার সময় ভেঙে পড়েছিলো। তবে ইরানে রেড ক্রিসেন্টের শেয়ার করা ক্লিপগুলোতে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশের জঙ্গল থেকে স্ট্রেচারে করে আচ্ছাদিত মরদেহ নিয়ে যাচ্ছে।
আর রহস্যজনক এই হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার ডালপালা ছড়িয়ে পড়ছে এবং এ ঘটনায় ইসরাইলে দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে বলে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেখান থেকে তাবরিজে ফেরার পথে জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
রাইসির বহনকারী হেলিকপ্টার এতোটাই দুর্গম জায়গায় বিধ্বস্ত হয় যে, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলগুলো রাতভর ঘন কুয়াশার মধ্যে পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখেও ঘটনাস্থলের সন্ধান পেতে হিমশিম খান। বিধ্বস্তের পর হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
উদ্ধারকর্মীরা বিধ্বস্ত এলাকায় জীবিত কারো সন্ধান না পাওয়ায়, সোমবার প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইরান। আরো মৃত্যু হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ানসহ ৯ জনের।
ইরানের কান্ডারি হয়েই রাইসি পশ্চিমাদের থরথরিয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন, ইসরাইলের যমদূত হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জনপ্রিয় এই নেতা ছিলেন ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের পরম আস্থার জায়গাজুড়ে। ডেইলি মেই লিখেছে গাজায় তেহরান সমর্থিত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে ইসলাইল। গত এপ্রিলে দুই দেশেই পরস্পরের ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করলে এই উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে।
ইরান এখনও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত এলাকার আশেপাশের বিশদ কোনো বিবরণ দেয়নি বা খারাপ আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণ বিবৃতি ছাড়া কোনো ব্যাখ্যাও দেয়নি। কিন্তু রাইসির বহনকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটির অবস্থা ছিল নাজুক, অনিরাপদ ও বেহাল অবস্থায়। কারণ ইসলামি প্রজাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকায় খুচরা যন্ত্রাংশগুলো সংগ্রহ করতে পারেনি।
রাইসির হেলিকপ্টারটি কখন তৈরি করা হয়েছিল তা জানা যায়নি, তবে বেলের এই মডেল ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটি প্রথম সার্ভিসে আসে সত্তরের দশকের প্রথম দিকে। এক হিসাবে বলা হয়েছে, রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি কমপক্ষে ৪৫ বছরের পুরনো।