প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা-ভূমিধসে বিপর্যস্ত নেপালে সোমবার পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৯২ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৩০ জন। দেশটির পুলিশের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
রোববার রাতজুড়ে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। ওই ভুক্তভোগীরা দুইটি বাসে করে কাঠমান্ডুর দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ভূমিধস হলে তাদের বাস দুইটি চাপা পড়ে। এছাড়া গত রোববার চাপা পড়া গাড়ি থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নেপালের পুলিশ জানিয়েছে, টানা বৃষ্টিতে বন্যা ও ভূমিধসে সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেইসঙ্গে দেশজুড়ে আহত হয়েছেন ৯৪ জন এবং ৩০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
দেশটির পুলিশের মুখপাত্র দান বাহাদুর কার্কি বার্তাসংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, এখনও উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। তাই নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রোববার সকাল পর্যন্ত তিন হাজার ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে হেলিকপ্টার, মোটরবোট ও ভেলা ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার তল্লাশি, উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। নেপালজুড়েই নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা, খাবার ও অন্যান্য জরুরি সেবা দেওয়া হচ্ছে।
দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে অনেক রাস্তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানীর দিকে যাওয়া বেশিরভাগ রাস্তাগুলোই এখনও বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে হাজার হাজার পর্যটক আটকা নানা স্থানে আটকা পড়ে আছেন।
বন্যায় কাঠমান্ডু উপত্যকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। ৪০ লাখ বাসিন্দার এ অঞ্চলটিতে ৩৭ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিতে স্কুল ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
নেপালের শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মী ভট্টরাই রোববার বলেছেন, দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্কুলগুলো তিনদিন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছি।
নেপালে গত শুক্রবার থেকে তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তা থেকেই এ বন্যা ও ভূমিধস শুরু হয়েছে। তবে রোববার দেশটিতে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজধানীর কিছু অংশে সর্বোচ্চ ৩২২ দশমিক ২ মিলিমিটার (১২ দশমিক ৭ ইঞ্চি) বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে অঞ্চলটির প্রধান নদী বাগমতীর পানি বিপৎসীমার ২ দশমিক ২ মিটার (৭ ফুট) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার কাঠমান্ডুর নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তারা কাঠমান্ডু উপত্যকায় বিগত ৪০-৪৫ বছরে এমন বিধ্বংসী বন্যা দেখেননি।