ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে রোগীর চাপে পা ফেলার উপায় নেই। বেড ছাড়াও ফ্লোরের উপরই চিকিৎসা চলছে রোগীদের।
রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্স আর চিকিৎসকদের। মুগদা হাসপাতালে ভর্তি আছেন প্রায় ৩৩১ জন ডেঙ্গু রোগী। মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার বেড়েছে প্রায় ৫০ জন রোগী। এর মধ্যে শিশু রোগী প্রায় একশ।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বুধবার পর্যন্ত হাসাপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের মতো। গত বছরের একই সময়ের রোগী বেড়েছে ৬ গুণ।
গত বছর একই সময়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২০২। আর চলতি বছর এই সংখ্যা ১০ হাজারে পৌঁছেছে।
মানিকনগর থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালে এই পরিবার। বাসায় তাদের আরও দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত। জুরাইন থেকে আড়াই মাসের সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে আরেকটি পরিবারের। ১০১ জ্বর আর প্লাটিলেট নেমেছে ২০ হাজারে। সন্তানদের দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম বাবা মায়ের।
মুগদা হাসপাতালের বেড আর ফ্লোরে রোগীর ছড়াছড়ি। এক ফ্লোরে প্রায় ২৫০ জন রোগীর জন্য নার্স আছে মাত্র তিন থেকে চারজন। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুর ধরণেও এসেছে পরিবর্তন। অনেক রোগীরই পেট ফুলে যাচ্ছে। ফুসফুসে পানি জমছে। দ্রুত রক্তচাপও কমছে। পরিস্থিতিকে শঙ্কাজনক বলছেন তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেন-২ দিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। জ্বর, মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া হলে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের।
মুগদা ছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ঢাকা শিশু হাসপাতালও একই চিত্র। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কোন বেড ফাঁকা নেই। বাইরেও আছে রোগী। শিশু চিকিৎসকরা বলছেন, শকসিনড্রম নিয়েই এবার বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্রটাও একই রকম। ভয়াবহ। জুনেও ভর্তি ছিলো ১২ জন। আর এখন ১৪৯ জন।
জটিল অবস্থায় রোগীরা ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতেও বেগ পেতে হচ্ছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশির এলাকা ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন রাজধানীর সব বাসিন্দাই।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে ঢাকার সবাই: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ঢাকার দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক-মৌসুম জরিপের ফলাফলে দেখো গেছে অধিকাংশ ওয়ার্ডই রয়েছে ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে। ঢাকার উত্তরে ৫৪টি এবং দক্ষিণে ৭৫টিসহ মোট ওয়ার্ড রয়েছে ১১৯টি। এর মধ্যে ৫৭টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ২৮টি এবং উত্তর সিটির ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জরিপে ঢাকা মহানগরীতে এডিসের লার্ভার ঘনত্ব পাওয়া গেছে তার চেয়েও বেশি। দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বহুতল ভবনে এই হার আরও বেশি।
আরও পড়ুন: এডিস মশার লার্ভা পেলে ১৫ মিনিটেই ধ্বংস: তাপস
এদিকে কোথাও এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া গেলে তা ১৫ মিনিটের মধ্যেই ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তাই লার্ভার সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিটি করপোরেশনকে জানানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
ডেঙ্গু চিকিৎসার মান বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসা সেবার মান পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একজন রোগী যেন শঙ্কাজনক অবস্থায় না যায়।
একাত্তর/আরবি