প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। চিঠিতে টিউলিপ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে, তা মীমাংসা করতে চান তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ এনেছে কর্তৃপক্ষ। গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদ ও গণমাধ্যমে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে শোরগোল হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের অনুসন্ধান এখনও চলছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
‘ঘুষ’ হিসেবে একটি আবাসন কোম্পানির কাছ থেকে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে একটি ফ্ল্যাট নেয়ার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টিউলিপকে তলবও করেছিল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে টিউলিপের ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করার কথাও দুদক বলেছে।
প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপক্ষীয় সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হবেন মঙ্গলবার। দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও এই সফরে তার সঙ্গী হচ্ছেন। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ এগিয়ে নিতেই তারা এই সফরে যাচ্ছেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, আমি যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক, লন্ডনে জন্মেছি এবং গত এক দশক ধরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিনিধিত্ব করছি।
তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পত্তি নেই এবং সেখানে সম্পত্তি বা বাণিজ্য করার কোনো আগ্রহ বা পরিকল্পনা আমার ছিল না, এখনও নেই। আমি বাংলাদেশকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসি, কিন্তু দেশটি আমার জন্মভূমি নয়। আমি যুক্তরাজ্যেই বড় হয়েছি, বেড়ে উঠেছি এবং নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করেছি।
টিউলিপ আরও বলেন, আমি দুদকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছি। লন্ডনে আমার আইনজীবীরা এ ইস্যুতে দুদকের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে কিন্তু দুদক আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি। তারা আমাকে তলব করে ঢাকার যে ঠিকানায় চিঠি পাঠাচ্ছে, সেটিও সঠিক নয়।
চিঠিতে তিনি লেখেন, এই যে একটি অলীক অনুসন্ধান দুদক শুরু করেছে- তার প্রতিটি পদক্ষেপ মিডিয়ার সামনে প্রকাশ হচ্ছে এবং তা করা হচ্ছে আমার লিগ্যাল টিমের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই। আপনি যুক্তরাজ্য সফরে আসছেন। আমি আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী। আমার সঙ্গে আমার খালা শেখ হাসিনার সম্পর্ক নিয়ে যেসব ভুল ধারণা বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের বরাতে ছড়িয়ে পড়েছে, আমি আশাবাদী যে আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাতের পর সেসব দূর হবে।
প্রসঙ্গত, রাজা চার্লসের আমন্ত্রণে মঙ্গলবার চার দিনের এক সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে রাজা এবং প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।