অবশেষে বরফ গললো অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির সম্পর্কে। উভয় পক্ষের কিছুটা ছাড়ে এগিয়ে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শুক্রবার লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকের পর, যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ হলে নির্বাচন হতে পারে ২০২৬ সালে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেই। নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানান, শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
১৩ জুন, লন্ডন। সময় সকাল ৯টা। বাংলাদেশের রাজনীতির বহুল আলোচিত বৈঠক। এক সাথে বসলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়ের বৈঠক থেকে রাজনীতিতে আসলো এক পশলা বৃষ্টির পরশ।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) বৈঠকটি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকের পর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এপ্রিল নয় জাতীয় নির্বাচন হতে পরে আগামী বছর রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেই। এক সাথে সংবাদ সম্মেলন করে উভয়পক্ষ।
লন্ডন সময় সকাল ১১টা দিকে যৌথ ব্রিফিং হয়। এতে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
যৌথ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হবার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমরা কোনো সমস্যা দেখি না। কেউ দেখলে তা ভুল দেখছেন। নির্বাচন নিয়ে আমরা দুপক্ষই যৌথ বিবৃতিতে বলে দিয়েছি। আশা করি নির্বাচন কমিশন শিগগিরই তারিখ ঘোষণা করবে।
শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞ ও তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নির্বাচনী রূপরেখায় প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, সংস্কার ও বিচার নিয়েও যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট, নির্বাচনের আগেই আমরা এর অগ্রগতি দেখতে পাব।
বৈঠক নিয়ে উভয়পক্ষ সন্তুষ্ট কী-না প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, সন্তুষ্ট না হলেতো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।
নির্বাচনের একটি সঠিক তারিখ নির্ধারণে সমস্যা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর রহমান বলেন, এর কোনো সমস্যাই নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না। কেউ যদি দেখে তাহলে ভুল দেখছেন। নির্বাচন কমিশন শিগগিরই তারিখ ঘোষণা করবে।
ব্রিফিংয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব বিষয়েই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা হয়েছে। বৈঠক নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।
সংস্কার নিয়ে যে দীর্ঘ আলোচনা হচ্ছে এ বিষয়ে তারেক রহমানের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি পরিষ্কার। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেসবে সংস্কার হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিষয়টি এমন নয় যে সব সংস্কার এখনই শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচনের পরেও সংস্কার অব্যাহত থাকবে। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আমরা মনে করছি। তাই এটি অব্যাহত থাকবে।
এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনও বাধা নেই তিনি যখন খুশি দেশে ফিরতে পারেন। সময়মতো তিনি এই সিদ্ধান্ত নেবেন।
লন্ডন বৈঠকের আগে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে। ঈদের আগের সন্ধ্যায় আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
এই ঘোষণার পরপরই, তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে, হঠাৎ করেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ড. ইউনূসের বৈঠকের খবর আসে। সেখানেই আপাত পরিসমাপ্তি ঘটলো রাজনৈতিক ডামাডোলের।