বাংলাদেশ থেকে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন ৯০ মিলিয়ন বা প্রায় ৯ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের গুরুতর ও সংগঠিত অপরাধ দমন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান- এনসিএ। সরকারি নথিপত্রে ঘেঁটে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না।
বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন লন্ডনের দুটি সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ পেয়েছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি। সংস্থাটি সম্পদ জব্দের মোট ৯টি আদেশ পেয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে তহবিল আত্মসাতের অভিযোগের পর এই পদক্ষেপ নেয়া হলো।
শুক্রবার এমন তথ্য দিয়ে ব্রিটেনের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ব্রিটেনের প্রচলিত আইনে বড় ধরনের জেল জরিমানা হতে পারে জড়িতদের।
জব্দ করা সম্পত্তির একটি হলো লন্ডনের ১৭ গ্রসভেনর স্কোয়ারে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, যা ২০১০ সালে ছয় দশমিক পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হয়েছিল এবং অন্যটি উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেন্সে অবস্থিত, যা পরের বছর এক দশমিক দুই মিলিয়ন পাউন্ডে অধিগ্রহণ করা হয়েছিলো।
জব্দের আদেশ অনুযায়ী, আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান লন্ডনে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে পারবেন না। বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ নিয়ে গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে শায়ান ও শাহরিয়ার- এই দুজনের নাম রয়েছে।
এদের মধ্যে শায়ান হচ্ছেন শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে আর শাহরিয়ার সালমানের ভাতিজা। হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন সালমান রহমান। পরে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন।
আর কাগুজে কোম্পানি খুলে লন্ডনে টাকা পাচার এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং ভাতিজা ও ব্যবসায়ী সোহেল এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
লন্ডনে সম্পদের প্রতিটি ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, আইল অব ম্যান বা জার্সিতে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কেনা হয়েছে বলে কোম্পানিগুলোর আবাসন নথিতে উল্লেখ আছে। ১২ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৯ কোটি ৭৩ লাখ) থেকে শুরু করে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডের (৫৮৩ কোটি ৫৩ লাখ) মধ্যে একেকটি সম্পদ কেনা হয়েছে।
গত বছর গার্ডিয়ান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে শায়ান ও শাহরিয়ারের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। সেই অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পদের খোঁজ মেলে। এনসিএ যেসব সম্পদ জব্দ করেছে তার মধ্যে উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেন্সের একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
গ্রেশাম গার্ডেনসের বাড়িটিতে আগে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা থাকতেন। তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন এমপি। শেখ হাসিনার দল সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়ি উপহার নেয়ার খবরে সমালোচনার মধ্যে সম্প্রতি ব্রিটেনের লেবার সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন টিউলিপ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের নীতিবিষয়ক পরিচালক ডানকান হেইমস বলেন, আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের তদন্ত চালু রাখতে এবং অবিলম্বে সব সন্দেহজনক সম্পদ জব্দের আহ্বান জানাই। এনসিএ বলেছে, চলমান সিভিল তদন্তের অংশ হিসেবে তারা কয়েকটি জব্দ আদেশ পেয়েছে।