লক্ষ্মীপুর মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার পথে বখাটেদের অত্যাচারে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর এলাকার। নিপীড়নের শিকার কিশোরীটি স্থানীয় বানাতুল দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ- স্থানীয় যুবক হাসান, আসিফ ও কাউসার দীর্ঘদিন ধরে কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। বিষয়টি প্রশাসন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বার বার জানানো হলেও তারা নির্বিকার। তাদের এই নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
কিশোরীর বাবা বলেন, ঘটনাটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তারা গুরুত্ব দেননি। বরং সমঝোতার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। পড়াশোনা বন্ধ করে ঘরে বসে আছে।
নিপীড়নের শিকার কিশোরীটি জানায়, প্রতিদিন ভয় নিয়ে বের হই। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেলে আমার পথ আটকায়, মোবাইল নম্বর চায়। না বললে টানাহেঁচড়া, ভিডিও করা আর তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। একদিন কিছু পথচারী এগিয়ে না এলে কী হতো জানি না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী জানায়, সে এবং তার বান্ধবী ওই ছেলেদের দিয়ে একই রকম হয়রানির শিকার হয়েছিলো। সেই সময়েও কেউ কিছু করেনি।
এদিকে ঘটনাটি সাংবাদিকদের কানে যাওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত যুবকরা। এমনকি বন্ধ রেখেছেন মুঠোফোন। এজন্য তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও মেলেনি উত্তর।
স্থানীয় বিএনপি নেতা খোরশেদ ঢালী বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এলাকায় এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বরাবরই নিষ্ক্রিয়। এখন সময় এসেছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার।
অপরদিকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ফখরুল ইসলাম এই ঘটনাকে ‘ছোট বিষয়’ উল্লেখ করে বলেন, ছেলেদের অভিভাবকদের জানিয়েছি, তারা সন্তানদের শাসন করেছে।
রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ নিজাম উদ্দিন ভূঞা বলেন, এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান খান বলেন, এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে শুনেছেন। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ পান নাই। তার পরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে এলাকায় এবং মাদ্রাসাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এই ঘটনায় এলাকার প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ রয়েছে। তাই সুরাহা করা যাচ্ছে না।
ব্র্যাকের এক জরিপ বলছে, দেশের ৬৪ শতাংশ স্কুলগামী মেয়ে পথে উত্ত্যক্তের শিকার হয়। শিশু অধিকার ফোরামের মতে, ২০২৪ সালে দেশে দেড় হাজারের বেশি কিশোরী হয়রানির শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৩৮% ঘটেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে।