ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল পেতে ব্যর্থ হয়েছে সদ্য শপশ নেয়া নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি। ফলে প্রথমবারের মতো জোট শরিকদের উপর নির্ভর করেই সরকার গঠন করতে হয়েছে গত দুই মেয়াদে দাপটের সঙ্গে ভারতকে শাসন করা দলটি। অন্যদিকে, নির্বাচনে অভাবনীয় ফল করেছে কংগ্রেস।
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীণ দলটির পূণর্জন্ম হয়েছে এবারের লোকসভার ভোটে। আগেরবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আসন পেয়েছে আর ইনডিয়া জোট প্রায় সমানে সমান টেক্কা দিয়েছে মোদীর এনডিএ জোটকে। কংগ্রেসের এমন পুনরুত্থানে নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে পণ্ডিত জহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর উত্তরসূরিরা।
কংগ্রেসের উত্থান এবং আশাতীত সাফল্যের পেছনের মূল কারিগর হিসাবে রাহুল গান্ধীর রাম উচ্চারিত হলেও, তাঁর পেছনেও আছেন আরেক কারিগর। তিনি নির্বাচনে লড়াই করেননি ঠিকই, কিন্তু সম্মুখ সমরের গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা। তিনি হচ্ছেন বিজেপির তথা নরেন্দ্র মোদির শাহজাদী খ্যাত প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
রাহুলের একমাত্র এবং বড় বোন সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ২০১৯ সালে। ক্যারিশমাটিক প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে তখন গণমাধ্যমগুলোতে হয়েছিলো ইতিবাচক আলোচনা। সেই প্রমাণও তিনি রেখেছেন। কয়েক বছরে কংগ্রেসের চেহারা আমূল বদলে ফেলেছেন ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় নাতনি প্রিয়াঙ্কা।
চেহারা, চাল-চলন কথাবার্তা, মানুষকে কাছে টানা প্রিয়াঙ্কার একটি দারুণ ক্ষমতা। তিনি যে ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি এবং রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সেটি তাঁকে দেখলে বা তাঁর কথা শুনলেই বোঝা যায়। মনে করা হয়, রাহুলের পরিণত হয়ে উঠার পেছনে বোন প্রিয়াঙ্কার অবদানই বেশি। ভারত জোড়ো যাত্রা, ভারত ন্যায় যাত্রা থেকে শুরু করে পথে প্রান্তরে সভা সমাবেশ-প্রচারে সব দিকেই ভাইয়ের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
সেই প্রিয়াঙ্কা এবার নেপথ্যে কংগ্রেসের হাল ধরেছেন। তাঁর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিলো ইন্দিরা গান্ধীরও। জানা গেছে, প্রকাশ্যে তিনি প্রিয়াঙ্কার রাজনৈতিক ভবিষ্যতবানী করে গেছেন। রাহুলকে নয় রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কাকেই এগিয়ে রেখেছিলেন ‘আয়রন লেডি’ ইন্দিরা গান্ধী। আর বর্তমান সময়ে কংগ্রেসের আয়রন লেডি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
কারণটা সবারই জানা, এবারের নির্বাচনে এতটা ব্যাকফুটে যেতে হবে মোদীর বিজেপিকে, সেটি অনুমানে আনেনি কেউই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেসের এমন আশা জাগানিয়া ফলের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। নিজে প্রার্থী না হলেও, ভোটের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন ইন্দিরা গান্ধীর এই নাতনি।
শুধু তাই নয়, দলীয় নেতাকর্মীদেরও সমানতালে পথ দেখিয়ে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা। নির্বাচনে নিজের কথা অর্থাৎ সুবক্তা হিসেবে তুমুল খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রিয়াঙ্কা। নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করতেও পিছপা হননি গান্ধী পরিবারের এই কন্যা। কারণ বছরের পর বছর ধরে বিজেপি নেতাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে ভাই-বোনকে।
কখনও রাহুলকে 'পাপ্পু' আর প্রিয়াঙ্কাকে 'শাহজাদি' বলে বারবার উপহাস করেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু বিরোধীদের কটাক্ষ এবার আর হালে পানি পেল না। এবারের ভোটে মোদীকে দেখিয়ে দিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। সরকার গঠন করলেও শরিকদের নিয়ে ব্যতিব্যস্তই থাকতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।