এ যেন এক বিরল বন্ধুত্ব! আমেরিকার চিরশত্রু রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যেহেতু আমেরিকার বন্ধু ভারত আর রাশিয়ার শত্রু আমেরিকা। এই নিয়ে রীতিমত আগুন জ্বলছে পশ্চিমাদের মনে। এরইমধ্যে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর প্রথম বিদেশ সফর হিসাবে রাশিয়াকে বেছে নিয়েছেন দিল্লির কর্তা নরেন্দ্র মোদী।
এই ভালোবাসার একটাই লক্ষ্য, পশ্চিমাদের সাথে রাজনীতির নতুন এক খেলায় মেতে উঠেছেন রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। উত্তর কোরিয়া-চীনকে কাছে টানার পর এবার ভারতের দিকে নজর রুশ নেতার। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। মাত্রই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভারতের জাতীয় নির্বাচন। রাহুল চমকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও আবারও সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার।
সে কারণে নিজ দেশে রোষানলে থাকা পশ্চিমা ঘেঁষা মোদী নিশ্চয়ই কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই পুতিনের আমন্ত্রণে হাজির হলেন রাশিয়ায়। এই ঘটনা দেখে রাগে গর গর করছেন নির্বাচনের আগমুহূর্তে নিজ দলেই কোনঠাসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাশিয়ায় মোদীর সফরকে নজরে রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব।
শুধু তাই নয় এরইমধ্যে ভারতের সাথে রাশিয়ার বন্ধুত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। সোমবারই দু’দিনের সফরে রাশিয়ায় যান নরেন্দ্র মোদী। যখনই মস্কোয় সফর করছেন, ঠিক সে সময়ই উদ্বেগের কথা ভেসে আসলো মার্কিন মুলুক থেকে।
মোদীর রুশ সফরের দিকে যে পশ্চিমি দুনিয়ার নজর, সেটিও সম্প্রতি প্রকাশ করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র। তিনি দাবি করেন, মোদীর রাশিয়া সফরে ঈর্ষাকাতর পশ্চিমি দুনিয়া। কূটনৈতিক মহলের অনেকের মতে, নাম না করে আমেরিকাকেই লক্ষ্যবস্তু করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র।
শুধু তাই নয়, মোদির রুশ সফর নিয়ে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেন, রাশিয়ায় গিয়ে মোদী কী বক্তব্য রাখছেন, সে দিকে আমরা নজর রেখেছি। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্ব নিয়ে আমরা এরইমধ্যে দিল্লির কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছি।
ভারত হোক বা যে কোনও দেশ, যারা রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখছে, তারা অবশ্যই মস্কোকে জাতিসংঘের নির্দেশিকা মেনে চলার কথা মনে করিয়ে দেবে।
২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে মোদীকে সেদেশে আমন্ত্রণ জানান পুতিন। সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই ভারতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীকে স্বাগত ত্রুটি রাখেনি পুতিন প্রশাসন। মস্কো বিমানবন্দরে মোদীকে স্বাগত জানান রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ।
বিমানবন্দরে দেয়া হচ্ছে ‘গার্ড অব অনার’। পুতিনের সঙ্গে সোমবার নৈশভোজও করেন তিনি। সেই একান্ত আলাপচারিতায় একে অন্যের প্রশংসাও করেছেন দুই নেতা। পাশাপাশি এই সফরে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েো আলোচনা করেছেন দুই নেতা।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, রাশিয়ায় যে ভারতীয়রা আছেন, বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছে। পুতিন যেন যুদ্ধ থেকে ভারতীয়দের অব্যাহতি দেন সেই অনুরোধও জানান মোদি। এই কথায় ইতিবাচক সাড়া মিলেছে পুতিনের কণ্ঠে।
ভারতীয়দের রুশ সেনাবাহিনী থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তারা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান-সহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির তিরস্কার শুনতে হয়েছে রাশিয়াকে। এমনকি, বহু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। তবে আমেরিকার চোখরাঙানি থাকার পরেও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায়নি ভারত।
যদিও পুতিন ও মোদির বৈঠক নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনেস্কিরও। এই বৈঠককে বিশাল হতাশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এই নেতা। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতাকে মস্কোতে বিশ্বের সবচেয়ে রক্তপিপাসু অপরাধীর সঙ্গে আলিঙ্গন করতে দেখা শান্তি প্রচেষ্টার জন্য একটি বিধ্বংসী আঘাত।