কথা ছিলো মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আট দিন থাকবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি বুচ উইলমোর। গেলো পাঁচ ৫ জুন তারা সেখানে পা রাখেন। তারপর ৮০ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও পৃথিবীতে ফিরতে পারেননি তারা। কারণ, যে যানটিতে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দেন, সেটি হঠাৎ করে বিগড়ে যাওয়াতে নির্ধারিত সময়ে তাদের আর ফেরা হয়নি।
অবশেষে শনিবার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালো, দুই মহাকাশচারীকে বাদ দিয়েই পৃথিবীতে ফিরে আসবে ইলন মাস্কের স্টারলাইনার স্পেসক্রাফ্ট। তাহলে সুনীতা ও বুচের কী হবে? নাসা বলেছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের আগে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরা হচ্ছে না।
নাসা আরও জানিয়েছে, মহাকাশচারী বুচ উইলমোর এবং সুনীতা উইলিয়ামস স্পেসএক্সের মালিকানাধীন ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির কোন এক সময়ে পৃথিবীতে ফিরবেন। সেই সঙ্গে যে যানটিতে করে সুনীতারা মহাকাশে গিয়েছিলেন, সেটিকেও পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।
নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, সংশ্লিষ্ট মহাকাশযানটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই বুচ এবং সুনিকে আইএসএস-এ রেখে চালক ছাড়াই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে বোয়িং এর স্টারলাইনারকে।
নাসা এও জানিয়েছে, নির্ধারিত প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত গবেষণা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সিস্টেম পরীক্ষাসহ আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যাবেন সুনীতারা। নাসা বলছে, বোয়িং সংস্থার যে মহাকাশযান স্টারলাইনার পাঠানো হয়েছে, তার প্রপালশনে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মহাকাশ যাত্রার সময়ই ২৮টি থাস্টারের মধ্যে পাঁচটি চালুই হতে পারেনি এবং হিলিয়াম গ্যাস লিক করে যায়, যা মহাকাশযানের ভারসাম্য বজায় রাখছিল। এতে দুই মহাকাশচারীকে নিয়ে ফেরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেই কারণেই পৃথিবীতে ফাঁকা মহাকাশযানই ফিরিয়ে আনা হবে।
মহাকাশযান ফিরলে নাসা ও বোয়িং সংস্থা স্টারলাইনারের পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখবে। সে সঙ্গে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে স্পেস এক্সের সঙ্গে যৌথভাবে একটি মহাকাশযান তৈরি করছে নাসা। সেটাই মহাকাশে পাঠিয়ে ফেব্রুয়ারিতে সুনীতাদের উদ্ধার করা হবে। এই মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছে ক্র-৯।
এই মাহাকাশযানে মোট চারজনের জায়গা থাকবে। যানটিকে নিয়ে মহাকাশে যাবেন দুই মহাকাশচারী। সেই যানেই ফিরবেন সুনীতা ও বুচ উইলমোর। এই মিশন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই শেষ হতে পারে। তার আগ পর্যন্ত মহাকাশে যে দায়িত্ব নিয়ে গিয়েছিলেন সুনীতারা, তাই করবেন তারা। দু’জনেই সুস্থ আছেন।
আমেরিকার মিলিটারি স্পেস সিস্টেমসের সাবেক কম্যান্ডার রুডি রিডল্ফি বলেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ধাক্কা খেয়ে জ্বলে যেতে পারে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটি। খাড়া অবস্থায় মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে গেলে, তার বর্মটি নষ্ট হয়ে গিয়ে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সেই সঙ্গে কার্যত বাষ্পীভূত হয়ে উবে যেতে পারেন সুনীতারা। ফলে মনে করা হচ্ছে, এই ঝুঁকির কারণেই আপাতত সুনীতাদের ছাড়াই পৃথিবীতে ফেরানো হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশযানটিকে।
এদিকে, দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে মহাকাশচারীদের শরীর খারাপ হতে শুরু করেছে বলে খবর রটে ছিলো। দুজনের পেশি শিথিল হয়ে যাচ্ছে, হাড়ের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। তবে নাসা জানিয়েছে, এই ধরনের সমস্যা মহাকাশচারীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ব্যাপার। তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এর আগে, ৩২২ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস। এক সময় সর্বোচ্চ স্পেসওয়াকের রেকর্ডও তার দখলে ছিলো।