অবশেষে ঘরে ফিরছেন মার্কিন নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোরে। কথা ছিলো মাত্র আট দিন থাকবেন মহাকাশ স্টেশনে, কিন্তু এক দুর্ঘটনার কারণে ফিরছেন ৯ মাস পর। তাদের আনতে মহাকাশে গেছে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স নির্মিত মহাকাশ যান ক্রিউ-১০।
নাসা জানিয়েছে, এরিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে সফলভাবে সুনীতাদের বের করে নিয়েছে ক্রিউ-১০। পৃথিবীতে ফিরতে তাঁদের সময় লাগবে ১৭ ঘন্টা। সুনীতা ও বুচকে নিয়ে চার সদস্যের ক্রু এখন বুধবার ভোরে, বাংলাদেশ সময় ভোর চারটা নাগাদ ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নাসা প্রথমে বুধবার তাদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছিলো, কিন্তু সপ্তাহের শেষের দিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। আগেই জানানো হয়, সুনীতাদের ঘরে ফেরার যাত্রা লাইভ দেখা যাবে। নাসার সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার শুরু হবার কথা বুধবার ভোর পৌণে তিনটা থেকে।
ইতিমধ্যেই নাসা মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে আনডকিংয়ের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছে। তাতে দেখা গেছে, চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারের মধ্যে আলো হয়ে জ্বলছেন সুনীতারা। মহাশূন্য ভাসছে তাদের নিতে যাওয়া মাস্কের ড্রাগনযান। তাতেই রয়েছেন এই মার্কিন নভোশ্চররা।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ ঘাঁটি থেকে ৯ মাস পর বেরিয়ে মহাশূণ্যে ভাসলেন সুনীতা ও উইলমোর। এর আগেও বহুবার মহাকাশ ঘাঁটির বাইরে পা রেখেছেন তিনি। কিন্তু এবারের স্বাদটা অন্যরকম। অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন তিনি। গত ৯ মাস ধরে কার্যত এই দিনটার জন্যই যেন অপেক্ষা করেছিলেন সুনীতারা।
প্রযুক্তিগত কিছু ত্রুটির কারণে ন’মাস সেখানে থাকতে হয়েছে তাঁদের। এবার পৃথিবীতে ফিরে কিসের অভাববোধ করবেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত সুনীতা, মহাকাশ স্টেশনে বসে নিজের মুখেই জানিয়েছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। তাঁর কথায়, সব কিছুই মিস করব।
মহাকাশ স্টেশনে বসে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সুনীতা। সেখানে তিনি মহাকাশে বসবাস নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনার কথা জানান। আর তা বলতে গিয়েই জানান, পৃথিবীতে ফিরে গেলে কিসের অভাববোধ করবেন। মহাকাশের সব কিছুরই অভাব অনুভব করবেন বলে জানান সুনীতা।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারে সুনীতা জানান, এই নিয়ে তৃতীয়বার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন। কী ভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সেই মহাকাশ স্টেশনের, তা নিজের চোখে দেখেছেন। জানান, মহাকাশে দীর্ঘ দিন থাকার ফলে তিনি এবং উইলমোর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছেন।
সমস্যার সমাধানে নতুন নতুন পথ পেয়েছেন দুই নভোচারী। সেই ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ তিনি পরবর্তী জীবনে ধরে রাখতে চান। তাঁর কথায়, আমি এই অনুপ্রেরণা এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্ফুলিঙ্গ হারাতে চাই না। যখন আমি এখন থেকে চলে যাব, তখনও এটা রেখে দিতেই হবে। জীবনের বাকি সময়ে সেই স্ফুলিঙ্গ আলো হয়ে পথ দেখাবে।
আট দিনের পরিবর্তে প্রায় ন’মাস কেটেছে মহাকাশে। সেই নিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন কতটা উদ্বেগে ছিলেন, সে কথাও সাক্ষাৎকারে জানান সুনীতা। তিনি বলেন, ওঁদের (পরিবার এবং বন্ধু) কাছে এই সময় রোলার কোস্টারের মতো। আমাদের থেকে একটু বেশিই ভুগেছেন ওরা। আমরা এখানে একটা অভিযানে এসেছি।
সুনীতা আরও যোগ করেন, নির্দিষ্ট কিছু কাজ রোজ করতেই হয়। প্রতিটি দিন আমাদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। কারণ আমরা মহাকাশে রয়েছি। এটা বেশ মজারও। কিন্তু যাঁরা পৃথিবীতে রয়েছেন, তাঁদের কাছে বিষয়টি অনেক শক্ত। তাঁরা জানেন না, আমরা কবে ফিরব। এই অনিশ্চয়তাই খুব কঠিন।
গত রোববার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছান ক্রিউ-১০-এর চার মহাকাশচারী। তাঁরা হলেন নাসার অ্যান ম্যাক্লেন, নিকোল আইয়ার্স, জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার প্রতিনিধি টাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমসের প্রতিনিধি কিরিল পেসকভ।
সুনীতা এবং উইলমোরের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়েছে। তাঁদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার সুনীতাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের ড্রাগন মহাকাশযান। সুনীতাদের সঙ্গে ফিরবেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভোচারী আলেকজান্ডার গরবোনোভ।