দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থানের ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর কেমন প্রভাব পড়ে? আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৯ মাসের বেশি সময় ধরে মহাকাশের দুই নভোচারী সুনীতি উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর আটকে থাকার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। গবেষণায় দেখা গেছে, দৃষ্টিশক্তি হারানো, হাড় ক্ষয় ও ওজন কমে যাওয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে মহাকাশচারীদের।
মহাকাশচারীরা দীর্ঘদিন মহাকাশে অবস্থান করলে তাদের শরীরে ঘটে যেতে পারে অদ্ভুত সব পরিবর্তন। বদলে যেতে পারে তাদের পেশি ও মস্তিষ্ক, প্রভাব পড়তে পারে পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়াতে। মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ক্রমাগত টান খুব কম থাকার কারণে পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানুষের পিঠ, ঘাড়, ঊরু ও পায়ের হাঁটুর নিচের পেশিতে। মাইক্রোগ্র্যাভিটি খুব বেশি কাজ না করায় ধীরে ধীরে এগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
মহাকাশে মাত্র দুই সপ্তাহে পেশির ঘনত্ব ২০ শতাংশ পর্যন্ত এবং তিন থেকে ছয় মাসে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
আবার হাড়ের ঘনত্ব কমলে হাড়ে চিড় ধরার ঝুঁকি বাড়ে। সেটি আগের অবস্থায় ফিরে আসতে চার বছরের বেশি সময় লাগে। মহাকাশে ওজনহীনতার কারণে সেখানে গেলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় খাপ খাইয়ে নেয়া। এরপরই আসে মোশন সিকনেস। আরও বড়ও সমস্যা ওজনহীনতার কারণে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম সরে যাওয়া।
তাই নভোচারীদের জন্য শারীরিক ব্যায়াম বাধ্যতামূলক। আর, মহাকাশে দীর্ঘ দিন থাকার ফলে নভোচারীদের দৃষ্টিশক্তিও কমে যায়। তাই নভোচারীরা পৃথিবীতে ফেরার পর দৃষ্টিশক্তি ও চোখের আকার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বছর খানিক সময় লেগে যায়। তবে, কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, মহাকাশে যাওয়ার আগে ও ফেরার পর নভোচারীদের পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়াসহ অন্য অণুজীবের উপস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এছাড়া, জীনগত পরিবর্তনসহ মহাকাশে নানা তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে কমে যায় রক্তের শ্বেতকণিকাও।