আলোচনা শুরুর প্রায় এক দশক পর কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে একটি চুক্তিতে একমত হয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়। শনিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এই চুক্তিতে রাজি হয়েছে তারা। এদিকে, জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি ডলার দেবে পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো। এই সিদ্ধান্তকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ স্বাগত জানালেও অসন্তোষ জানিয়েছে জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা অনেক দেশ।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তিনশ বিলিয়ন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে ধনী দেশগুলো। জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও প্রতিরোধে সহায়তার জন্য এ সহায়তা দেয়া হবে। আজারবাইজানে রাজধানী বাকুতে ওই সম্মেলন সমঝোতার জন্য অতিরিক্ত তেত্রিশ ঘণ্টা সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত লম্বা সময় আলোচনার পর দেশগুলো এ বিষয়ে একমত হতে পারলো।
২০৩৫ সাল পর্যন্ত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোকে বছরে ৩০ হাজার কোটি ডলার দেবে পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, জলবায়ু তহবিলে জমা দেয়া অর্থ দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে আরও পরিবেশবান্ধব করতে তুলবে এবং দেশ-গুলোয় জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় খরচ করা হবে। বর্তমানে এই তহবিলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জমা দিচ্ছে ধনী দেশগুলো।
শনিবার উন্নয়ন দেশগুলো, বিশেষত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নাটকীয়ভাবে ক্ষতিপূরণের আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। রোববার শেষ পর্যন্ত কিছু পরিবর্তন এনে চুক্তিটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এ সময় করতালি ও উল্লাস করেন অনেকে। তবে বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধিরা এ সময় ক্ষোভ জানান।
জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য চুক্তিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা খুবই দুর্বল। তবে আরও অর্থের অঙ্গীকার মানে হলেন, দরিদ্র দেশগুলো যে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যায্য বোঝা বহন করে চলেছে তার প্রতি একটি স্বীকৃতি। জলবায়ু সংকটের পেছনে এসব দেশের অবদান তুলনামূলক অনেক কম, কিন্তু তারাও এর শিকার হচ্ছে।
ছোট দেশগুলো আরও সমালোচনা করে বলেছে, আমরা জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছি না। এবারের সম্মেলনে এ বিষয়ে কিছুটা সামঞ্জস্য এসেছে। এ বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে আরও আলোচনা প্রয়োজন। জলবায়ু নীতিতে জার্মান সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।
জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইন স্টেইল বলেছেন, এটা ছিল কঠিন যাত্রা কিন্তু আমরা চুক্তিটি করতে পেরেছি। যদিও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দেশসমূহের প্রতি যে আহবান গত বছর করা হয়েছিলো সে বিষয়ে কোন চুক্তি এবারের সম্মেলনে করা যায়নি।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে যে চুক্তি হতে যাচ্ছে, তাতে বলা হয়েছে, বৃক্ষরোপণ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে নানা প্রকল্প হাতে নেবে দরিদ্র দেশগুলো। এভাবে প্রতি এক টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর বিনিময়ে একটি ‘কার্বন ক্রেডিট’ পাবে তারা। বাকু সম্মেলনে ‘কার্বন ক্রেডিট’ কেনাবেচার একটি দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। জাতিসংঘের বাইরেও এই ‘ক্রেডিট’ সরাসরি কেনাবেচা করতে পারবে দুটি দেশ।