হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার বৃহস্পতিবার (৮ মে) একটি সর্বদলীয় সভা করেছেন। সভায় মঙ্গলবার দিনগত রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনার মাধ্যমে কীভাবে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালানো হয়েছে, তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, সংসদ ভবনের সর্বদলীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সভাপতিত্ব করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ, মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যেরা। কংগ্রেসের তরফে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।
সামরিক অভিযানের সম্ভাব্য প্রভাব এবং পাকিস্তানের তরফে যে কোন হামলার জবাবে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, অপারেশন সিঁদুরে একশ’র বেশি জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, এই অভিযান এখনও শেষ হয়নি।
রাজনাথ সিং বলেন, অপারেশন সিঁদুর একটি চলমান অভিযান এবং ভারত এই মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে চায় না, তবে পাকিস্তান যদি আক্রমণ করে তবে তারাও পাল্টা আক্রমণ করবে। সূত্রমতে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলা সম্পর্কে তথ্য ভাগাভাগি করলেও পরিস্থিতির সংবেদনশীলতায় বিস্তারিত তথ্য জানাননি তিনি।
কারণে সরকার সমস্ত বিবরণ ভাগ করে নিতে পারছে না বলে জোর দিয়েছেন। সূত্র জানায়, মি. সিং সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছেন যে, বিমান হামলায় প্রায় ১০০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে সংখ্যাটি নিশ্চিত করা হয়নি এবং এখনও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পাকিস্তান এবং পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ভারত বিমান হামলা চালানো এবং ভারতীয় মাটিতে হামলা চালানোর জন্য জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বাকে দায়ী করার পর এই দুই সংগঠনের ব্যবহৃত সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করার দাবি জানানোর একদিন পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তাও বিরোধী দলগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে উপস্থাপন করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ওই বার্তায় বলা হয়েছে, কঠিন পরিস্থিতিতে এই সময় দেশের প্রতিটি নাগরিকের একজোট থাকা প্রয়োজন। বিরোধী দলগুলোও সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সরকারকে যে কোনো পদক্ষেপে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বিরোধীদের আস্থায় নেয়ার জন্য অভিযানের আগে-পরে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকায় সরকারে প্রশংসা করেন। রাহুল এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বৈঠকে মোদীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
পরে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে খাড়গে বলেন, মোদী আগের বৈঠকেও ছিলেন না। মোদী মনে করেন তিনি সংসদের ঊর্ধ্বে। আমরা তাকে এনিয়ে জিজ্ঞাসা করবো। কিন্তু এখন সঙ্কটের সময়, কারও সমালোচনা করতে চাই না। আর রাহুল, কিছু বিবরণ গণমাধ্যমের সাথে আলোচনা করা যাবে না কারণ সেগুলো গোপনীয়।
সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরন রিজিজু বলেন, দলীয় সীমানা ছাড়িয়ে রাজনৈতিক নেতারা সভায় পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশ যখন এমন সংকটের মুখোমুখি, তখন রাজনীতির কোনও স্থান নেই। সকল নেতা সর্বসম্মতভাবে সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করেছেন। সকলেই বলেছেন যে আমরা সরকার এবং বাহিনীর সকল পদক্ষেপকে সমর্থন করব। কারও কোনও বিরোধিতা ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।