অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। স্থানীয় সময় রোববার (৮ জুন) টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, যতদিন বিক্ষোভ চলবে, ততদিন সব জায়গায় সেনা থাকবে। ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করে একে ক্ষমতার উদ্বেগজনক অপব্যবহার বলেছে বিরোধীদল ডেমোক্র্যাট।
এবার দাবানলে নয়, বিক্ষোভকারীদের আগুনে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে রোববার টানা তৃতীয়দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন হাজারো মানুষ।
এদিন ভোর থেকেই লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এসময় বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি একটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। এই বিক্ষোভ দমনে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা।
ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল, ভাঙা বোতলসহ নানা কিছু ছুড়ছে। এ অবস্থায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রশাসন শহরের মানুষের জন্য এসব করছে না। নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সব করছে। নথিবিহীন অভিবাসীরাও প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স দেয় সরকারকে । তারা এখানে এসে নিজেদের পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। তারা কোনো সন্ত্রাসী নয় যে এভাবে গ্রেপ্তার করা হবে।
তাদের অভিযোগ, সরকার অন্যায়ভাবে অভিযান চালিয়ে কর্মজীবী মানুষদের গ্রেপ্তার করছে। তাদের সঙ্গে জঘন্য আচরণ করা হচ্ছে। আর প্রশাসন নিজেদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সেনাদের দাঁড় করিয়ে একটি গৃহযুদ্ধ বাধানোর পথে আছে।
এদিন বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম। বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে সব জায়গায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভকারীরা সহিংস হচ্ছে, যা কখনোই মেনে নেয়া হবে না। যদি দেশের জন্য কোনো পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনী আরও কঠোর অবস্থানে যাবে। সবখানে সেনা মোতায়েন করা হবে। বাইডেনের আমলে দেশে যে অরাজকতা চলেছে তা আমাদের সময়ে চলবে না।
ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধীদল ডেমোক্র্যাট পার্টি। এটিকে ‘ক্ষমতার উদ্বেগজনক অপব্যবহার’ বলেছে তারা।
এদিকে, ট্রাম্পের সীমান্ত বিষয়ক উপদেষ্টা টম হোমান বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি জানান, অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে এ অভিযান চলমান থাকবে। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালাবেন কিংবা সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করবেন, তাদের প্রতি জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ৬ জুন শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে অভিযানে নামে ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস বিভাগের আইনপ্রয়োগকারী বাহিনী ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট ।
সেই অভিযান চলাকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের উপশহর প্যারামাউন্টে পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংঘাতের ব্যাপ্তি ও তীব্রতা বাড়তে থাকায় গতকাল শনিবার লস অ্যাঞ্জেলেসে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়।