ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরাইলের হামলায় যোগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে চলমানে সংঘাত বন্ধে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে সতর্ক করে বলেছিলেন, তিনি জানেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা কোথায় আছেন, তবে আপাতত তাকে হত্যা করবেন না। সেই সঙ্গে আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ধৈর্যের বাধ খুবই ক্ষীণ হয়ে রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা দলের সাথে ইসরাইল-ইরান সংঘাত নিয়ে একটি বৈঠক করেন। এসময় ইরানের ফোর্দো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্র হামলায় ইসরাইলের সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা আগ্রহ দেখান ট্রাম্প। তবে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে সম্পূর্ণ একমত হওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের আকাশসীমার উপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ নিলেও দেশটির ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার। কারণ ইসরাইলের হাতে মাটির গভীরে থাকা কোন স্থাপনা ধ্বংসের মতো বাঙ্কার ব্লাস্টার নেই। তবে আমেরিকার কাছে সেসব মিসাইল আছে। ইসরাইলের যুদ্ধবিমানগুলো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে আছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, মিসাইল ভাণ্ডার, বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
সোমবার, বেশ কয়েকজন ইসরাইলি কর্মকর্তা ইরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেন। ইরানের আকাশ সীমার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে অর্জিত সফলতার সঙ্গে তুলনা করে যাচ্ছে ইসরাইল। যেমন গাজা ও লেবাননের উপর, যেখানে ইসরাইল ইচ্ছামতো বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার বলেছেন, ইরানের আকাশসীমার উপর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ একটি পরিবর্তন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি বলেছেন, পাইলটরা তেহরানের উপর অগণিত আরও লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারে, ডজন ডজন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাটারি ধ্বংস করেছে।
কিন্তু ইসরাইলি কর্মকর্তারা এখনও পর্যন্ত যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রশংসা করলেও, কেউ কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারবে না, যদি না যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত বোমারু বিমান নিয়ে অভিযানে যোগ দেয়, যা ভূগর্ভস্থ গভীরে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে।
লন্ডনের কিংস কলেজের স্কুল অফ সিকিউরিটি স্টাডিজের একজন সিনিয়র লেকচারার আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, ইসরাইল অনেক অপারেশনাল এবং কৌশলগত সাফল্য অর্জন করেছে; কিন্তু এটিকে কৌশলগত সাফল্যে রূপান্তরিত করার জন্য বিমান শক্তি যা দিতে পারে, তার চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন।
ক্রিগ বলেন, এমনকি সবচেয়ে ভারী মার্কিন বাঙ্কার-ধ্বংসকারী বোমাও ইরানের গভীরতম স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে লড়াই করতে পারে। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্রমণে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তিনি বাঙ্কার ব্লাস্টার মিসাইল ব্যবহার না করে স্থলভাগ দিয়ে বিশেষ কমান্ডো হামলা চালানোর পরামর্শ দিতে পারেন।