যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সেজন্যই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সফরে এসেছেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকা সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায়, আমরাও চাই। লু সম্পর্ক এগিয়ে নিতেই এ সফরে এসেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। আমাদের আলোচনা সে লক্ষ্যেই হয়েছে।
তিনি বলেন, একক দেশ হিসেবে আমাদের রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। আমি ডোনাল্ড লুকে অনুরোধ জানিয়েছি, বাংলাদেশে ৪০টি আইটি ভিলেজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে যেন যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ বাড়ায়। যদিও কিছু বিনিয়োগ তারা এরই মধ্যে করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ডোনাল্ড লু বলেছেন, আমাদের ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য। যে জিএসপি সুবিধা আমরা আগে পেতাম এখন পাই না, সেটি তারা ফিরিয়ে দিতে চায়। রিইন্ট্রিডিউস করলে তারা জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশকে আবার দিতে চায়। তবে সেটি এখনো রিইন্ট্রিডিউস হয়নি। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে, যেটি আমরা রিভিউ করছি। সেটি নিয়ে গতকাল আইনমন্ত্রীর সঙ্গে তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, বিশেষত আমাদের রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে চায়। একই সঙ্গে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমকে আধুনিক করতেও সহায়তা দিতে চায় তারা। ট্যাক্স ফাঁকি বন্ধে ট্যাক্স কালেকশনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সহায়তা করতে চায়। এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা তাদের সহায়তা চেয়েছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, ডোনাল্ড লু বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিস্তৃত করার জন্য তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যেন আরও ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারে, উচ্চতর পড়াশোনা করতে পারে এবং নারীর ক্ষমতায়নেও তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি একটি প্রস্তাব দিয়েছি যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যেন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম স্টাবলিস করা হয়। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
তিন দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন ডোনাল্ড লু। গত জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এটিই প্রথম সফর।
ঢাকা আসার পর লু রাতেই যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনের নৈশভোজে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের বেশ কয়েকজন নীতি নির্ধারক।
জো বাইডেনের হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আসার পর থেকেই বাংলাদেশে আলোচিত ডোনাল্ড লু। ভিসা নীতি, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে এর আগে সরব দেখা গেছে তাকে।
তবে এবারের সফরের শুরু থেকেই সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে মনে করা হচ্ছে লুকে; নির্বাচনের আগে যখন একাধিকবার ঢাকা সফর করেছিলেন, তখন অবশ্য এমনটি দেখা যায়নি। তাকে নিয়ে তখন সরকারবিরোধীরাই বেশি মাতামাতি করেছিল।
এবার অবশ্য চিত্র পাল্টেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে যে, ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে তারা উৎসাহী নয়।