সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কোটা আন্দোলন তাদের হাতে নেই উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে এসব কর্মসূচি হচ্ছে ও তাদের লাশের রাজনীতির কারণেই ছয়জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
বুধবার সকালে, রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলনের মধ্যে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত চাচ্ছিলো দেশে লাশ তৈরি হোক এবং মঙ্গলবার তারা এই লাশগুলো তৈরি করেছে। মঙ্গলবার সারাদেশে যে নৈরাজ্যের অপচেষ্টা হয়েছে তার পেছনে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার বাসে আগুন, মোটর সাইকেল ভাঙচুর, মেট্রোরেলে হামলা হয়েছে। এগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাজ না। বিএনপি-জামাত ঢুকে এসব কর্মকাণ্ড করেছে। আন্দোলনকারীরা এখন তাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সহানুভূতিশীল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে, যারাই রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক ড. হাছান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিএনপি-জামায়াত কোটা আন্দোলনের কর্মসূচির ওপর ভর করে মাঠ অস্থিতিশীল করতে চাইছে। যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে সেই আন্দোলন আর তাদের হাতে নাই। ছিনতাই হয়ে গেছে। আন্দোলনের নেতারা বিক্রি হয়ে গেছে।
ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝেই কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের আগের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সরকার বাতিল করেছে। গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষা সম্পূর্ণ কোটাবিহীনভাবে হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই কোটা ছিল, স্বাধীনতার আগেও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী ও জেলা কোটা ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল না, যেটি আমাদের সরকার পুনর্বহাল করেছিল। পরে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আমাদের সরকার কোটা বাতিল করে।
এরপর একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্টে গেলে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে কোটা পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেয় আদালত। মন্ত্রী বলেন, এখানেই শেষ নয়, হাইকোর্টের এই রায় আবার সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের স্থিতাদেশ অনুযায়ী কোটা নাই।
মন্ত্রী জানান, কোটার ভিত্তিতে চাকুরি হবে না, সেই পরিস্থিতিই বিরাজমান। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এটি জানার পরও, যারা আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেটি তাদেরই দুরভিসন্ধি। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে তারা সেখানে সম্পৃক্ত করছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-রংপুরসহ সারাদেশে বিএনপি-জামাতের লোকজন লাঠিসোটা অস্ত্র নিয়ে নেমেছে। চট্টগ্রামে শিবির বাহিনী মানুষের রগ কেটেছে। চট্টগ্রামে ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার সমাবেশ করেও কোন কর্মসূচি দেয়নি, রাত সাড়ে বারোটায় তারা গায়েবানা জানাজা ও মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে, এর মানে লাশের রাজনীতি। এর মানে, এই কর্মসূচি কোটা আন্দোলনকারীদের নয়। এই কর্মসূচি বিএনপি-জামাতের প্রেসক্রিপশনে দেওয়া হয়েছে।