শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দুপুর আড়াইটার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
এতে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১১৮টি শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ১৪০০ জনের বেশি।
১১৪ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন বলা হয়, সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায় ব্যবহার করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এ ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। এসব ঘটনায় অধিকতর ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে, সংস্থাটি রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থেকে বিরত থাকার সুপারিশ করেছে।
এছাড়া অবাধ নির্বাচনের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিরও সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠনের নজির থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটিই প্রথম।
এ প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করার কথা ছিলো, তবে মঙ্গলবার জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানায়, প্রতিবেদন প্রকাশের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী, বুধবার জেনেভার প্যালেস ডেস নেশনসে ঢাকা সময় বিকেল আড়াইটায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনটি ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো তদন্ত করে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে এই তদন্ত শুরু করে। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, গোষ্ঠী ও সংস্থার সঙ্গে কথা বলে।
মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এ বিষয়ে বলেন, এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল। বিক্ষোভ দমন করার কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারে, তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।