মানবপাচার ঠেকাতে এবং বৈধ অভিবাসন বাড়াতে প্রথমবারের মতো সমঝোতা স্মারক সই করলো বাংলাদেশ ও ইতালি। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল বলছেন, এই সমঝোতার মাধ্যমে কমবে অবৈধ অভিবাসন, প্রাণহানির ঝুঁকি, কম মজুরি ও গ্রেপ্তারের মতো দুর্ভোগ। আর, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, শ্রমিকদের বৈধপথে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করে ইতালি।
মৃত্যু, নৌকাডুবিসহ নানা ঝুঁকি। তবু উত্তাল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যান হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এর বড় অংশটাই বাংলাদেশি। অথচ ২০২৩ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে ফ্লুসি অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় ৪ লাখ ৫২ হাজার বিদেশি কর্মী নিচ্ছে ইতালি।
বিএমইটি-এর তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৮২টি দেশে পাঠানো বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে শীর্ষ গন্তব্য ছিল ইতালি। এ সময় দেশটি বৈধভাবে ২৬, ৩৩৩ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের ভুল এবং জাল কাগজের কারণে এখন ঝুলে আছে দেশটিতে বৈধ ভিসাপ্রত্যাশী প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর ভবিষ্যত।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটিবিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হলো বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে। এর ফলে দেশটিতে দক্ষ-অদক্ষ কর্মী যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বাড়বে রেমিট্যান্স প্রবাহ। পাশাপাশি, এই সমঝোতার ফলে কমে আসবে অবৈধ ভাবে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা।
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, আমরা সব সময় শ্রমিকদের বৈধ পথে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করি। ইতালি সরকার দীর্ঘদিন থেকে এটা নিয়ে কাজ করে আসছে। এই সমঝোতা স্মারকের উদ্দেশ্যে দুইটা দেশের বন্ধুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।
বৈধপথে দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে লাভবান হবে উভয় দেশই। ইতালির মতো উন্নত দেশে কাজ করে অধিক পরিমাণ রেমিট্যান্স আনা ও পাঠানো সম্ভব হবে বলেও জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ইতালি এখন বাংলাদেশ থেকে মৌসুমী ও নিয়মিত শ্রমিক নেবে। কোটা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও হবে।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে এটাই প্রথম এমওইউ। এর লক্ষ্য হলো বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার বন্ধ করা। ইতালি বাংলাদেশ থেকে সিজনাল ও নন-সিজনাল ওয়ার্কার নেবে এবং বিদ্যমান কোটার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কোটা বৃদ্ধির অনুরোধ জানানো হয়েছে। এমওইউতে উল্লেখ আছে বিদ্যমান কোটার বাইরে বাড়ানো সম্ভব কি না, তা ইতালি বিবেচনা করবে। এতে নির্দিষ্ট করে খাতের উল্লেখ নেই। এটি একটি 'মডালিটি অব দ্য এগ্রিমেন্ট' এ ধরনের চুক্তিতে বিস্তারিত তথ্য সাধারণত থাকে না।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ পথে যাওয়া অভিবাসীদের প্রাণহানির ঝুঁকি, কম মজুরি বা গ্রেপ্তারের মতো দুর্ভোগ কমে আসবে। বৈধ সুযোগ যত বাড়বে, মানুষ তত কম অবৈধ পথে যেতে আগ্রহী হবে। ইতালিকে বেশ আন্তরিক মনে হয়েছে।
তিনি জানান, দেশের কোনো একটি বা দুটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ইতালিকে আহ্বান জানানো হয়েছে, যেখানে তারা প্রয়োজনে ইতালিয়ান ভাষা বা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিতে পারে। ইতালি বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে বলে জানিয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত করা, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ বাড়ানো এবং বাংলাদেশকে 'হাই-রিস্ক' তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।