জামায়াতে ইসলামীর সহিংসতার আসন সাতক্ষীরা-২। একই সঙ্গে জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে খ্যাত এই আসন। ১৯৯১ সাল অনুষ্ঠিত সবগুলো নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছয়বারের মধ্যে এ আসনে জামায়াত জিতেছে তিনবার, জাতীয় পার্টি একবার এবং আওয়ামী লীগ দু’বার।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তাঁকে নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা বেশ অস্বস্তিতে আছেন বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর খড়্গহস্ত এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এতে অনেকেই অতিষ্ঠ।
২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি এই আসনে মহাজোট থেকে জয়ী হয়েছিল এবার তারা একক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক সময় এই আসনটি জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি বলা হলেও ২০১৩ সালের সহিংসতার পর থেকে তাদের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। বিএনপিও এই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সাতক্ষীরার নাম উঠলেই এখন সারাদেশের মানুষ মনে করে ২০১৩ সালে জামায়াতের সহিংসতার কথা। টনা সাত দিন আতঙ্কের নগরীতে পরিনত হয়ে ছিলো গোটা শহর। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মত, তারা আর যাই হোক আর আতঙ্ক চানন না। ফলে শান্তির পক্ষেই ভোট দেবেন তারা।
সেই শহরের আসন সাতক্ষীরা-২। সদর উপজেলার এই আসনে ১৯৯১ ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে জয়ী হয় জামায়াতে ইসলামী। এমনকী ১৯৮৬র নির্বাচনেও এখানে জামায়াত প্রার্থী সংসদ সদস্য ছিলেন।
জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নে এবং গত পাঁচ বছরের হিসাব-নিকাশে আওয়ামী লীগের অনেকেই এই আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন এ দলটিতে নেতৃত্ব সংকট ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আগ্রহী কমপক্ষে ছয়জন প্রার্থী । তারা প্রত্যেকেই যার যার মত করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং বলছেন, এটা এক ধরণের প্রতিযোগিতা। বড় দলে এটা খুব অস্বাভাবিক নয়।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশা করছেন। কয়েক দফা সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও তিনি এবার মনোনয়ন চাইবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী ও দলীয় প্রার্থী হিসেবেও জয়লাভ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের অন্যতম দাবিদার জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আ.হ.ম. তারেক উদ্দীন, সাবেক সচিব সাফি আহমেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক এরতেজা হাসান জজ।
সাতক্ষীরা সদর আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বরাবরই দুর্বল। ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিএনপির বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও জনসমর্থনের দিক থেকে দলটির অবস্থান চতুর্থ। এই আসনটিতে বিএনপি থেকে কেউ কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি অবস্থানে থাকে।
একসময় সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির বেশ দাপট ছিল। ২০০৮ সালে এম এ জব্বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জেলা জাতীয় পার্টির নেতারা প্রায়ই অভিযোগ করেন, সরকারের সঙ্গে থাকলেও সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির নেতাদের মূল্যায়ন করে না আওয়ামী লীগ। তবে ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
এবার এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রউফ, সদস্য সচিব আবদুল আলীম, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ও পৌর মেয়র তাসকীন আহমেদ চিশতির নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তারা কেউই এখনো সরাসরি মাঠে নামেনি।
জাতীয় সংসদের ১০৬ (সাতক্ষীরা-২) আসনটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরা পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।
এআর