চলমান তাপপ্রবাহে মানুষের ভোগান্তি যখন চরমে তখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা পানির সংকট। মিরপুর, শেওড়াপাড়া, জুরাইন ও নন্দীপাড়াসহ রাজধানীর অন্তত ১০টি এলাকায় ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। কোথাও একঘণ্টা করে দিনে দুবার। আবার কোথাও সারাদিনে একবার, তাও ময়লা ও দুগর্ন্ধযুক্ত।
এরমধ্যে ভাষানটেকে পানির সংকট সবেচেয়ে বেশি। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়ছেন প্রায় তিন মাস ধরে পানি পাচ্ছেন না তারা। যদিও বুধবার সকাল থেকে কয়েকটি পয়েন্টে খনন করে পানির পাইপ মেরামত করেছে ওয়াসা।
ওয়াসা কর্মচারিদের দাবি, গরমের মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়া আর লোকবল ঘাটতির কারণেই এ পরিস্থিতি।
ভাষানটেকে পানির ছোট্ট একটা পাইপ মেরামত করতে রীতিমত তিন ঘন্টারও বেশি সময় ধরে গর্ত করছিলেন ওয়াসার কর্মীরা। একাত্তরের ক্যামেরা দেখে অভিযোগ জানাতে ছুটে আসেন এলাকাবাসী।
সরাসরি সম্প্রচারে এই ঘটনা তুলে ধরার ১৫ মিনিটের মধ্যেই দ্রুতই গর্তটি ভরাট করেন ওয়াসা কর্মীরা। কিছুক্ষনের মধ্যেই মেলে জীবন বাঁচানোর পানি।
ওয়াসার ফিল্ড অফিসার বাবুল বলেন, সমস্যার সমাধান হয়েছে। তারপর গর্তগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। পুরো প্রেশার এখানে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
ভাষানটেকের প্রত্যাশার মোড়। অথচ নাগরিকদের কোনো প্রত্যাশাই পূরণ হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, এলাকার ১০ হাজার বাসিন্দার ভাগ্যে ওয়াসার পানি জুটতো মাত্র চার হাজার ৩০০ লিটার। এখান সেটা কমে তিন হাজার লিটারে ঠেকেছে। আর এই সংকট চলছে গেলো প্রায় পাঁচ মাস ধরে।
এক বাসিন্দা বলেন, ওয়াসার যে লোক এখানে দায়িত্বে সে ওয়াসার লাইনে মাত্র তিনটে প্যাঁচ ঘোরায়। যখন আমরা মাটি ঘুড়ে চাবি বের করলাম দেখলাম আরও ছয়টা প্যাঁচ। সমস্যটা এখানে।
পানির অবস্থা সম্পর্কে আরেক বাসিন্দা বলেন, মল মিশ্রিত পানির চেয়ে খারাপ পানি পাচ্ছি। পানের অযোগ্য।
উত্তর ধামালকোটের দিন মোহাম্মদ কলোনিতে সাবমার্সিবল পাম্পে রেশনিং করে পানি দিচ্ছে ওয়সা। কলসি-বালতি নিয়ে ছুটে আসতে আসতেই সময় শেষ। অথচ পাশেই ওয়াসার বিশাল পাম্প, অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
এক বাসিন্দা বলেন, পাম্পওয়ালাদের (ওয়াসা) সমস্যার কথা বলা হয়েছেঅ তারা বলে পাম্প নষ্ট।
আরেক বাসিন্দার অভিযোগ, ওয়াসার পানি কিনে আনতে হচ্ছে। পাম্প থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যারা চার-পাঁচতলার বাসিন্দা তারা খুব কষ্টে আছে। পানি ওপরে ওঠাতে পারে না।
এত সবের মধ্যেও হতাশ নন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। একাত্তরকে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সাহিদ আক্তার শিলা জানালেন, ছয় মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের লাইন পেলেই এক সপ্তাহের মধ্যে পাম্পটি চালু হয়ে যাবে।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহির আহমেদ বলেন, গরমের মৌসুম আসলেই এখানে পানির এত সংকট দেখা যায় যে, অনেকে দুই তিন দিন গোসল করতে পারে না। আমরা মেয়র ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছি। আরও একটা পাম্প বসবে। কিন্তু এতে সংকট কমবে না। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। এই ওয়ার্ডে ১২-১৩ লাখ বসবাস করছে।
তিনি বলেন, ওয়াসার সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলছি। আট ঘণ্টা পাম্প চালায় জেনারেটর দিয়ে। যদি ২৪ ঘণ্টা না চালানো হয় তবে সংকট সমাধান হবে না। ওয়াসা যদি আরও একাধিক পাম্প না বসায় তাহলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে পানি সংকট সমাধানে শহরের অলিগলিতে চলছে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি। কোথাও কোথাও সুয়ারেজ লাইন আর ওয়াসার পানির পাইপ মিলে মিশে একাকার। সেই জন্যই ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানির ভোগান্তি।