মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিত ও বিজ্ঞানের
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলাটি উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে দাবি করেছেন
তার স্বজনেরা।
আর মামলার বাদি মো. আসাদ মিয়া বলেছেন, না বুঝেই অন্যের ইচ্ছায় মামলায় কাগজে সই করেছেন তিনি। মামলার বাদি হতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলায় তিনি রাজি হয়ে যান।
গত ২০শে মার্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় মণ্ডল। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে প্রাসঙ্গিকভাবে ইসলাম ধর্ম বিষয়েও কথা বলেন।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং কথার মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান করা ও ধর্মগ্রন্থ অবমাননার অপরাধে এ মামলা ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় মামলা করেন আসাদ।
মামলার পর অভিযুক্ত শিক্ষক হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার বাদি স্কুলের ইলেকট্রিশিয়ান আসাদ জানান, এই ঘটনা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না তিনি। জানেন না তার মামলার উকিল কে? মূলত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায় তিনি মামলার কাগজে সই করেছিলেন।
আসাদ বলেন, গণিত শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল স্যারকে আমার চাকরি জীবনে ধর্ম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে শুনিনি। তিনি একজন ভালো শিক্ষক। মামলার বাদি হতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন এবং আমি তাতে রাজি হই।
বাদির বক্তব্য, তবে আমার সঙ্গে ঘটনার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ কোনো আলোচনা করেনি। শুধু মামলার বাদি হতে সদর থানায় ডাকা হয়েছিল। আমারও প্রশ্ন আমিই কেন এই মামলার বাদি? স্কুলে তো আরও অনেক মানুষ ছিলেন।
পঞ্চম শ্রেণি পাস আসাদ মিয়াঁ আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলেন। পরে পুলিশের লেখা এজাহার প্রধান শিক্ষক ও পুলিশ আমাকে পড়ে শোনায়। কিন্তু, এ এজাহার তৈরির আগে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। যেসব কথা এজাহারে লেখা হয়েছে তার ব্যাপারে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
হৃদয় মণ্ডল প্রায় ২১ বছর ধরে বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয় পড়ান। পরিবার নিয়ে স্কুলের পাশে একটি কোয়ার্টারে থাকেন। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্কুলশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের পরিবার।
হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে আমার ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারছি না। ওই স্কুলে ছাত্ররা আমার ছেলেকে ‘আসামির ছেলে’ বলে ডাকছে। তারপর থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাসায় কেউ এলে আশেপাশের লোকজন বিরূপ মন্তব্য করে। আমার স্বামী কোনো অপরাধ করেনি। সে ধর্ম নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করতে পারে না। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়েও ভয়ে আছি।
ববিতা আরও বলেন, বর্তমানে আমার স্বামী কারাগারে আছেন। তিনি ডায়াবেটিস রোগী। এখন ওষুধও খাচ্ছেন না। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তার চাকরির মেয়াদ আরও ৬ বছর আছে। দ্রুত জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও ক্লাসে ফিরতে চান তিনি।
আরও পড়ুন: এবার জনপ্রতি ফিতরা সর্বোচ্চ ২৩১০, সর্বনিম্ন ৭৫
হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রীর বড় ভাই বাদল হাওলাদার বলেন, বর্তমানে আমরা খুব ভয়ে আছি। আমাদের সমাজ অনেকটা একঘরে করে রেখেছে। বাসার বাইরে হৃদয় মণ্ডলের পরিচয় দিতেও ভয় লাগছে। দিনের বেলায়ও বাসার বাইরে যাচ্ছি না।
অন্যদিকে, যে স্কুলে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল, সেই স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীরা বলছেন, মন্ডল স্যার সব সময়ই বেশি জোড় দিতেন নিয়ম-কানুন শেখানোর উপর। শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানোর জন্যই সেদিন ভিডিও করা হয়নি।
মুন্সিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২৮ মার্চ ও ৪ এপ্রিল শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের জামিন আবেদন করা হলেও আদালত নাকচ করেন সেই আবেদন। পরে জামিন শুনানির জন্য ১০ই এপ্রিল দিন ঠিক করেন মুন্সিগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন।
একাত্তর/আরবিএস