শুধু চট্টগ্রামের একটি বড় গ্রুপ সোয়া কোটি টাকা পাচার করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গত সরকারের ১৫ বছরে দেশে কয়েকটি পরিবার ও গোষ্ঠী আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সে সম্পদ জব্দ করা সরকারের প্রথম লক্ষ্য।
কারা কোথায় কীভাবে সম্পদ জমা করেছে তা তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই জন্য বিদেশ সম্পদ অনুসন্ধানকারী সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কাজ করছে সরকার। তবে সম্পদ ফিরিয়ে আনার কাজ বেশ জটিল, সেক্ষেত্রে এক বছরও সময় লাগতে পারে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে 'মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম ও সমসাময়িক ব্যাংকিং' বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে বিদেশি সংস্থাগুলো পাচার হওয়া সম্পদ অনুসন্ধান ও নিরূপণ করছে। কারা কোথায় কীভাবে সম্পদ জমা করেছে তা তালিকা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে ২৬-২৭ শতাংশ, রপ্তানি বাড়ছে, রিজার্ভ জমা হয়েছে চার মাসের। সার্বিক আর্থিক খাত নিয়ে আমরা স্বস্তির মধ্যে আছি। শুধুমাত্র মূল্যস্ফীতি এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নামেনি, যা আগামীতে আরও কমবে।
গভর্নর বলেন, বিদেশে টাকা পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার চাইতে অর্থ পাচার বন্ধ করা জরুরি। সেজন্য প্রয়োজন আইন সংস্কার করবে সরকার।
বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত কিনা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িতের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মসংস্থান তদন্ত করলে তাকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানের তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে কেটে নেয়ার বিষয়টি নজরে আনলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, বিগত ১৫ বছরে অনিয়ন দুর্নীতি অনেকভাবে হয়েছে। সব অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কোনো ব্যাংক বেআইনিভাবে কর্মকর্তাদের টাকা কেটে নিলে তা তদন্ত করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।