জ্যামাইকায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে হারিকেন বেরিল। এতে দেশটি জুড়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে হারিকেন সতর্কতা উঠিয়ে জারি করা হয়েছে বন্যার সতর্কতা।
জ্যামাইকাতে আঘাত আনার আগে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জগুলোতে গেলো ক’দিন ধরে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে হারিকেন বেরিল। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রবল বাতাস এবং বৃষ্টির সাথে শক্তিশালী হারিকেন বেরিল জ্যামাইকায় আঘাত হেনেছে। এতে করে দ্বীপটির বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গাছপালা ভেঙে গেছে। ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাসসহ হারিকেনটি দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে। হারিকেনের তাণ্ডবে সেখানকার বহু রাস্তা প্লাবিত হয়েছে এবং ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে গেছে।
জ্যামাইকায় বেরিলের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অংশটি দ্বীপটির দক্ষিণ উপকূল দিয়ে স্থলে উঠে সামনে পড়া সব এলাকা তছনছ করে দেয়। বন্যাপ্রবণ এই এলাকাটি থেকে বাসিন্দাদের আগেই সরানো শুরু করেছিল জরুরি বিভাগের কর্মীরা। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এক হাজার জ্যামাইকান আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠে। দ্বীপের হ্যানোভার এলাকায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক নারী মারা গেছেন।
জ্যামাইকার দুর্যোগ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক রিচার্ড থম্পসন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, বুধবার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করার পর থেকে দ্বীপটির প্রধান বিমানবন্দরগুলো বন্ধ রয়েছে আর রাস্তাগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হারিকেনের সঙ্গে এই দ্বীপের বাসিন্দারা পরিচিত হলেও তারা জানাচ্ছেন, বেরিলের রূপ আগের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
জ্যামাইকা জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ব্যাপক ছিল এবং উপকূলের নিকটবর্তী কিছু রাস্তা ধ্বংস হয়ে গেছে। এদিকে, বেরিলের আঘাতে গ্রেনাডা দ্বীপে তিনজন মারা গেছেন। গত সোমবার এই হারিকেনটি প্রথম সেখানে আঘাত হানে। সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনসে একজন এবং অন্য তিনজন মারা গেছেন উত্তর ভেনেজুয়েলায়। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে প্রবলভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনের অংশ ইউনিয়ন আইল্যান্ডে হারিকেন বেরিলের তাণ্ডবে প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ি ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দ্বীপের প্রধানমন্ত্রী রালফ গনসালভেস বলেন, বেরিলের আঘাতে দেশটির ইউনিয়ন দ্বীপ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। সবাই গৃহহীন। এমন দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পুনর্নির্মাণ একটি দানবীয় প্রচেষ্টা হতে চলেছে। ঈশ্বরের কাছে সবাইকে সেই শক্তি অর্জনের প্রার্থনা করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার-এনএইচসি জানিয়েছে, পাঁচ মাত্রা থেকে বেরিল এখন ক্যাটাগরি তিন ঝড়ে পরিণত হয়েছে। হারিকেনটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। হারিকেনটির কেন্দ্র কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর এগিয়ে যাচ্ছে আর রাতের মধ্যেই সেখানে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিরাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেরিল ঘণ্টায় একটানা সর্বোচ্চ ২০৯ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ক্যারিবিয় অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া বেরিলের প্রভাবে ক্যারিবিয় অঞ্চলে প্রায় চার লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ক্যারিবিয়ান গণমাধ্যম জানিয়েছে, জ্যামাইকা, গ্রেনাডা, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনসে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় জাতিসংঘ তার জরুরি তহবিল থেকে ৪০ লাখ ডলার সহায়তা দিতে যাচ্ছে।