পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে গত প্রায় তিন দিন ধরে চলা, ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই ইনসাফ পিটিআই। বুধবার ভোরে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে, ইসলামাবাদে আন্দোলনরত পিটিআই কর্মী-সমর্থকদের ওপর মঙ্গলবার মধ্যরাতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইমরান খানের এই অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে সেনারা।
পিটিআই নেতা ইমরানের মুক্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে রাজধানী ইসলামাবাদে ছুটে এসেছিলেন অসংখ্য ভক্ত-সমর্থক ও তার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তবে রাতভর অভিযান চালিয়ে ইসলামাবাদের রেড জোন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে সক্ষম হয়েছে নিরাপত্তাকর্মীরা।
মধ্যরাত থেকে শুরু হয় পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর কঠোর অভিযান। তারা টিয়ার গ্যাস শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল লাঠি ও গুলতি। তারা সড়কে স্থাপিত কনটেইনার দিয়ে তৈরি রোডব্লকে আগুন লাগিয়ে দেয়।
বুধবার ভোরে, ইসলামাবাদের কেন্দ্রে সরকারি কার্যালয় অভিমুখী (রেড জোন নামে পরিচিত) সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে দাঙ্গা পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীদের বাসে করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। রাতের অভিযানে শতাধিক ইমরান সমর্থক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকারের বর্বরতা এবং নিরস্ত্র নাগরিকদের জন্য রাজধানীকে কসাইখানায় পরিণত করার পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দিচ্ছি।
সাবেক ক্ষমতাসীন দলটি আরও বলেছে, তারা দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের নির্দেশনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবে। দলটি বিক্ষোভ ও পরবর্তী সময়ে নাগরিকদের ওপর সরকারের বর্বরতার সব ঘটনা বিশ্লেষণ করছে। পরে এসব বিশ্লেষণ ইমরান খানের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইসলামাবাদের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন। ইমরান খানের স্ত্রীর নেতৃত্বে নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা রাজধানী সুরক্ষিত রেড জোনে ঢুকে পড়ে। পিটিআইয়ের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইসলামাবাদের আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।
ইসলামাবাদের রেড জোন এবং ডি-চকে পৌঁছানোর পর পুলিশ, রেঞ্জার্স এবং সেনা সদস্যদের হাতে ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হন পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা। মাঝরাতে সেখানে বড় ধরনের অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযানের আগে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ধরপাকড়ের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান এই কর্মসূচির দুই শীর্ষ নেতা খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপোর এবং ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি।
উল্লেখ্য, কারাবন্দি ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ডি-চকে সমাবেশের ডাক দেয় পিটিআই। সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়।
পিটিআইয়ের এই কর্মসূচিকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ অভিহিত করে দলীয় সব নেতা-কর্মীকে তাতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান ইমরান খান। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকা থেকে গেলো রোববার ইসলামাবাদ অভিমুখে গাড়িবহর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। এই গাড়িবহরে ছিলেন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও।
এই সমাবেশ ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী ইসলামাবাদ। সমাবেশে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পিটিআই নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত সাতজন নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে সেনা মোতায়েন করা হয়।