জার্মানিতে আবারও চরম রক্ষণশীল ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছে কমপক্ষে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ। রাজধানী বার্লিনে পার্লামেন্টের সামনে বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিক্ষোভ থেকে দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অভিবাসী বিদ্বেষী দল এএফডিকে ঠেকানোর আহ্বান জানানো পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল সিডিইউর তীব্র সমালোচনাও এসেছে।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে জার্মানির রাজনৈতিক দল সিডিইউর এক প্রস্তাবনা দেশটির সংসদে পাস হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন আলোচনার মাঝেই পাস হয় এই প্রস্তাব। এটি পাসের পরই রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অভিবাসী বিরোধী বিক্ষোভে লাখো মানুষের ঢল নামে। বার্লিনের সংসদ ভবন চত্বর, ঐতিহাসিক ব্রানডেনবুর্গার গেট ও স্ট্রেসে ডেস জিবসেন্টে ইউনিসহ নগরীর জিগেসসয়েলের আশেপাশে জড়ো হয়েছে আন্দোলনকারীরা।, ব্যানার ও কুশপুত্তলিকা নিয়ে মানুষের স্লোগানো মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
এক পুরুষ বিক্ষোভকারী বলেন, দেখুন এই সপ্তাহে অভিবাসন নিয়ে সিডিইউর প্রধান হিসেবে মের্জ সংসদে যা দেখালেন তা অগ্রহণযোগ্য। অথচ জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনীতির মন্দা নিয়ে তার ব্যস্ততা দেখলামই না। আরেক নারী বিক্ষোভকারী বলেন, সপ্তাহজুড়ে আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যে খেলা খেলছে তার বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা এক হয়েছি। হিটলারের উত্থান রাজনীতি থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
সমাবেশ শেষে লাখো সমাবেশকারী বিশাল মিছিল নিয়ে রাজধানীর সিডিইউর রাজনৈতিক দপ্তরের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসনসহ নানা ইস্যুতে এএফডির সঙ্গ না ছাড়লে আন্দোলন আরও কঠোর করার হুমকি দেন সমাবেশকারীরা। তবে বিশাল এই সমাবেশটি শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।
উগ্রবাদী দল এএফডি কোনো সামাজিক রাজনৈতিক দল নয়। এই দল ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি করে। তাই নগরে বন্দরে এই দলের প্রচার প্রচারণা ঠেকাতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। এরইমধ্যে জার্মান পার্লামেন্টে কঠোর অভিবাসন ও শরণার্থী নীতি নিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে বিতর্ক হয়েছে। অনেক সংসদ সদস্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বর্বরতার ঘটনাসহ স্বৈরাচার অ্যাডলফ হিটলারের জাতিবিদ্বেষী রাজনীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
এএফডির সহায়তায় খসড়া বিল পাসের পর সিডিইউয়ের প্রবল সমালোচনা করেন চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ। গ্রিন পার্টি ও অনেকগুলো মানবাধিকার সংগঠন ও চার্চও এর সমালোচনা করেছে। তাদের বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমঝোতা হয়েছিলো, অতি ডানপন্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কেউ চলবে না।
এখনো পর্যন্ত জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এই সমঝোতা মেনে চলেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হাতিয়ার করে নাৎসিদের উত্থানের কথা মাথায় রেখে তারা এই সমঝোতা করে। ডাপন্থীবিরোধী জোট বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলো। তাদের দাবি, এএফডির সঙ্গে কোনো সহযোগিতা নয়।
অন্যদিকে ড্রেসডেনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ম্যার্ৎসের জনসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ম্যার্ৎস সেখানে নির্বাচনী প্রচারের জন্য গিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ড্রেসডেনের রাস্তায় স্লোগান দেন, ম্যার্ৎস হলেন গণতন্ত্রের বিপদের কারণ, তার লজ্জিত হওয়া উচিত।