ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সারাদেশে সহিংসতা, মন্দির ভাঙচুর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘট্নায় প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সনাতন ধর্মের মানুষরা।
রোববার এসব ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং পূজা উদযাপন পরিষদসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। জানিয়েছেন আট দফা দাবিও।
আট দফা দাবিগুলো হলো
- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।
- ‘সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে।
- হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
- ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
- ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে।
- শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দিতে হবে।
ঢাকা
দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা চেয়ে রাজধানীর শাহবাগ তৃতীয় দিনের মতো মিছিল, শ্লোগান বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রোববার দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এসে জড়ো হন হাজারো মানুষ। তাদের দাবি, সংখ্যারঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার, বিচার ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বাস্তুহারাদের জায়গা জমি ফিরিয়ে দিতে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় তারা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এসময় বক্তরা বলেন, গত পাঁচ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ উপযুক্ত প্রতিকার মিলছে না। সরকার ও সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে হামলা বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এই ঘটনা আমাদের আরো বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলছে। আমরা এসব ঘটনার বিচার চাই।
এসময় অন্তবর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে সব ধর্মের ধর্মগ্রস্থ পাঠ না করার সমালোচনা করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে নতুন সরকার পেলেও একটি চরম বৈষম্যের মধ্য দিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু আমরা দেখলাম। এটি ভুল কিনা জানি না।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘সারা দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাতে আমরা সমাবেত হয়েছি। সকল হামলা, হত্যার বিচার চাই। সকল ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই ইস্যুতে কোনো আপোষ নয়। অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সুক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এই সরকারের কাছ থেকে সুংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় একটি ভালো কাজ চাই, তা হলো সংখ্যালঘু সুক্ষা আইন প্রণয়ন।’ নির্যাতনের মুখে সংখ্যালঘুরা দেশ ছাড়লে বাংলাদেশ পথ হারাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বরগুনা
এদিন বরগুনায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার উদ্যোগে আট দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বরগুনা আখড়াবাড়ি মন্দির প্রাঙ্গন থেকে একটি মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পৌর সুপার মার্কেটের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।
নরসিংদী
নরসিংদীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। রোববার নরসিংদী পৌর শহরের সদর রোডের দয়াময় আশ্রমের সামনে এই কর্মসূচি করেন তারা। ঐক্যবদ্ধ সনাতনী মঞ্চের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা।
রোববার বিকেল তিনটার দিকে কুমিল্লা নগরের পূবালী চত্ত্বরের প্রধান সড়কে বসে স্লোগান দেয় হিন্দু সম্প্রদায়ের তরুণ-যুবক- বৃদ্ধ-নারীরা। হাতে ছিলো ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়বো না’ লেখা প্লেকার্ড। মুখে প্রতিবাদী স্লোগান। পরে নগরের টাউনহল মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পরে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে বিপুল সংখ্যাক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে অধ্যক্ষ তাপস বকসি বলেন, অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে। আমাদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। ১৯৪৭, ১৯৭১ সালে পূর্বপুরুষরা চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ২০২৪ সালে আমরা দেশ ছেড়ে যাবো না। যতো দিন হামলা বন্ধ না হবে, ততো দিন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।
অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করে চিহ্নিত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিসহ হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তারা।
চট্টগ্রাম
দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও সনাতন সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ–সমাবেশ করা হয়েছে। রোববার বিকেলে আন্দরকিল্লা মোড়ে অবস্থান নেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে চেরাগী পাহাড় প্রদক্ষিণ করেন তারা। একই এলাকায় গতকাল (শনিবার)ও সমাবেশ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’, ‘আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীনতার এ কী হাল, নিয়ে গেল ঘরের চাল’ ইত্যাদি স্লোগানে দেশব্যাপী সংঘটিত মন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
সমাবেশে হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং বাস্তুহারাদের জায়গা জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা।
কর্মসূচি চলাকালে চেরাগী পাহাড়মুখী সড়কে গাড়ি চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকে। কর্মসূচিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুসহ জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হলে, বিচার না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে জানানো হয়, দেশব্যাপী নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর, মন্দির নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেন তারা।
সিলেট
সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দাবি নিয়ে সিলেটে সড়কে সড়কে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রোববার বিকেল তিনটায় সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সিলেট বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে তারা প্রথমে অবস্থান কমসূচি পালন করেন।পরে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিলেট নগরী প্রধান সড়ক গুলো প্রদক্ষিণ করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে সব ধর্মের মানুষের বসবাস, সেখানে সংখ্যালঘু মানুষের ওপর হামলা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমাদের দাবি, সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
খুলনা
খুলনায় সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা ও আগুনের প্রতিবাদে রোববার বিকেলে শিববাড়ি মোড়ে সমাবেশ করেছে সনাতন ধর্মালম্বীরা। খুলনার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের বাড়ি ঘরের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
একইসঙ্গে তারা সাম্প্রদায়িকতা এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মলম্বীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধনসহ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রোববার বিকেলে নগরীর শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বরিশাল
অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচার, হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং বাস্তুহারাদের জায়গা-জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে বরিশালে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
রোববার বিকেলে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চাভুক্ত সংগঠনসমূহের আয়োজন এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, বরিশালের বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মন্দিরসহ বসতবাড়িতে ভাঙচুর করা হচ্ছে। সম্পদ লুট করা হচ্ছে। আর প্রশাসন এ অবধি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় লুটপাট, হামলার ঘটনা বেড়েই চলছে।
তারা বলেন, প্রয়োজনের সময় কিংবা দেশের স্বার্থে অন্য সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা সমান তালে এগিয়ে যাই। তখন আমরা বাংলাদেশর নাগরিক হলেও এখন আমরা সংখ্যালঘু, তাই আমাদের ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে। বরিশালের বাকেরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সেখানকার ফরিদপুর ইউনিয়নে বিপুল চন্দ্র ও বিনয় দাসের বাড়িতে হামলার পাশাপাশি লুটপাট চালানো হয়েছে। প্রায় সপ্তাহ পার হতে বসলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোন খোঁজ নেয়া হয়নি, এখনও তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বোয়ালিয়াতে এক হিন্দু পরিবারের পুকুরের মাছ লুট করা হয়েছে, মন্দিরে হামলা চালিয়ে টিন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীন দেশে বার বার এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি আমরা আর দেখতে চাইনা। গ্রামাঞ্চলে শুধু নয় হামলা হয়েছে বরিশাল নগরীতেও। আমরা অনতিবিলম্বে সব হামলার বিচার ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
তারা আরও বলেন, আজ আমাদের অজানা আতঙ্কে বসতবাড়ি, এলাকার নিরাপত্তায় রাতভর পাহারা দিতে হচ্ছে। এই আতঙ্ক থেকে মুক্তি চাই এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চাই।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মঠ, মন্দির ও সংগঠনের কর্মীসহ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ দুপুরের পর থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে জড়ো হতে থাকে। এসময় তারা বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুনে নানা প্রতিবাদের কথা তুলে ধরেন। ছিলো লাল ও কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ।
ঝিনাইদহ
সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা, নির্যাতনের প্রতিবাদে ঝিনাইদহে মানববন্ধন পালিত হয়েছে। এতে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা কমিটি গঠন, সংসদীয় আসন বরাদ্দসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের মধুগঞ্জ বাজারে কালীগঞ্জ সনাতনী সম্প্রদায়ের ব্যানারে এ কর্মসূচী পালিত হয়। এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নেয়।
ঘণ্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচিতে কালীগঞ্জ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা তাদের দাবি মেনে নেওয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদ জানিয়ে সবার নিরাপত্তার দাবি জানান।
বগুড়া
সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও ভীতি সঞ্চারের দ্রুত বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং নৈরাজ্যের অবসান চেয়ে বগুড়ায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার দুপুরে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং সনাতনী জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অংশ নেন।
‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, ‘আমার দেশ সবার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়বো না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘সনাতনীর ওপর আক্রমণ মানি না মানব না’, ‘আমার ঘরে হামলা কেন, জবাব চাই, জবাব দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী ও পুরুষ মানববন্ধন এবং মিছিলে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, আজ আমরা কয়েক দিন ধরে দিন-রাত পাহারা দিয়ে যাচ্ছি। নিজেদের জানমাল আর সম্ভ্রম রক্ষায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু এখন শুধু আত্মরক্ষা করলেই হবেনা, সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ চলবে। আমরা আর পালিয়ে থাকতে চাই না। এই মাটি আমাদেরও। এটা আমাদের পিতৃপুরুষের সম্পত্তি। আমরা আর নিজ গৃহে পরবাসী থাকতে চাই না। আমরা কোথাও যেতে চাই না।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে।