২৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিজ বাড়িতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এক তরুণ নিহত হন। ১৯ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম উইন রোজারিও। নিহতের ঘটনার পরে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ছেলেটিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানায়। তারা জানায়, পুলিশের দিকে কাঁচি নিয়ে তেড়ে আসায় তাকে গুলি করা হয়।
সম্প্রতি সেই দিনের ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কে এটর্নি জেনারেল অফিস। তারা এই ঘটনার তদন্ত করছে। ভিডিওতে দেখা যায় কীভাবে বাড়িতে ঢুকে সরাসরি গুলি করা হয় ছেলেটিকে। তার মা এবং ভাইয়ের ‘ডোন্ট শ্যুট’ অনুরোধ উপেক্ষা করে সরাসরি গুলি করার ভিডিওটি দেখে স্তম্ভিত নেটদুনিয়া।
পুলিশ অফিসারদের শরীরে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, উইন কাঁচি হাতে তেড়ে আসে। তখন মা কাছে গিয়ে তার কাছ থেকে কাঁচিটি কেড়ে নেন এবং তা পাশের একটি চেয়ারে রাখেন। তিনি উইনকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, এর মধ্যেই দুপুর ১ টা ৫৪ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের সময় উইনকে প্রথম গুলি করা হয়। উইনের হাতে তখন কাঁচি বা কিছুই ছিলো না।
মা তাকে বোঝাচ্ছিলেন এবং সে তার কথা শুনছিলো। গুলি করার পর সে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারের ওপর থেকে কাঁচিটি হাতে নেয়। এ পর্যায়ে তার মা আবারও তার দিকে ছুটে যায় এবং কাঁচিটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তার ছোটভাই উৎস তার মাকে টেনে আলাদা করার চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে মা এবং ছোট ভাইয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ঘরের এক পাশে চলে যায় উইন, অন্য পাশে থাকে তার মা ও ছোট ভাই এবং পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ যখন দুপুর ১ টা ৫৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডে উইন-কে দ্বিতীয়বার গুলি করে, তখন উইন এবং পুলিশের মাঝখানে ছিল তার মা এবং ভাই। মা এবং ভাইকে ডিঙ্গিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করার মতো পরিস্থিতিতে সে ছিল না। তবুও পুলিশ তাকে পরপর চারটি গুলি করে।
উইন রোজারিও-র হত্যা অনেকগুলো বিষয় সামনে এনেছে। বাফেলো প্রবাসী এক বাংলাদেশি বলেন, এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা সাদা চামড়ার ব্যক্তির সঙ্গে যে আচরণ করে কালো বা ব্রাউন চামড়ার মানুষদের সাথে সেই আচরণ করে না।
নিউইয়র্ক পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা চার্লস লিবারম্যান বলেন, রোজারিও পুলিশ অফিসারদের থেকে যথেষ্ট দূরে ছিলেন, যাতে করে পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্যান্য পদ্ধতির ব্যবহার করার জন্য পুলিশ আরও বেশি সময় পেতে পারতো। তিনি বলেন, এই শুটিংয়ের দরকার ছিল না। এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জামসহ অতিরিক্ত ইউনিট না যাওয়া পর্যন্ত তার ব্যক্তিটিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারতো।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের জন জে কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস-এর ক্রিমিনাল জাস্টিজ বিভাগের অধ্যাপক ডেনিস কেনি। তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করবো, যখন সে তার মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেল, তখন তাকে আবার আঘাত করা হলো কেন? তারপর তো সে আর কিছু করেনি। সে সময় তাকে ডি-এস্কেলেট করা যেতো।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিউইয়র্কে গত দুই মাসে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন রোজারিও। আমেরিকায় পুলিশের হাতে বিচারবহির্ভুত হত্যা একটি নিয়মিত ঘটনা।
Gun Violence Archive (GVA)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ৪৭২ জন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন ২৭৩ জন। ২০২৩ সালে পুলিশের গুলিতে ১৩৪৪ জন মানুষ মারা গেছেন।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার মানুষ পুলিশের গুলিতে বিনা বিচারে মারা গেছে।
মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'ম্যাপিং পুলিশ' বলছে, আন্তর্জাতিক আইনে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির দ্বারা বেআইনিভাবে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে তদন্ত, বিচার এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, আমেরিকায় পুলিশের দ্বারা সংঘটিত ৯৯ শতাংশ হত্যার কোনো জবাবদিহি করা হয়নি।