নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে প্রায় এগারশ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আত্মসাৎ করার অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিগত সরকারের আমলে গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণে থাকা ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে এই অর্থ আত্মসাতে অভিযোগে ৪৩ জনকে আসামি করে মামলা করে দুদক।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলো এস আলম শিল্প গ্রুপ। আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আঁতাত করে ব্যাংক দখলের অন্যতম হোতা ছিলো এস আলম সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার কারণে এস আলমের বিষয়ে বরারবরই নিরব ছিলো আওয়ামী লীগ সরকার।
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এস আলমের ব্যাংক লুটের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সামনে আসে ব্যাংক লুটের টাকায় নিজের ও পতার রিবারের সদস্যদের বিলাশী জীবনের গল্প।
পতিত সরকারের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের হোতা ছিলো এস আলম গ্রুপ।
ব্যাংক লুটপাট করে দেশের আর্থিক খাতকে ভঙ্গুর দশায় পরিণত করেছে এস আলম। বিএফআইইউ-এর তথ্য বলছে, চারটি ব্যাংক থেকে এস আলম কমপক্ষে ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি আত্মসাত করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণের নামে এস আলম গ্রুপের প্রায় ১১শ' কোটি টাকার আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। অনুসনন্ধান শেষে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। আসামী করা হয়, এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট ৪৩ জনকে।
সোমবার দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক তানজির আহমেদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, 'নামসর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামের ঋণের ৫৪৯ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এস আলমসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অপর মামলায় একইভাবে ৫৫৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রস্তাব (ঋণ প্রস্তাব) শাখা হতে জোনাল অফিস ও পরে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ ও ঋণ অনুমোদন করে নামসর্বস্ব কোম্পানি মেসার্স সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, জুবিলি রোড শাখায় বাই মুরাবাহা (হাইপো) বিনিয়োগ সীমা ৭২ কোটি এবং এলসি সীমা ৮০ কোটি টাকার বিনিয়োগ (ঋণ) সুবিধা প্রদান করা হয়। ওই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ (ঋণ) গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি না নেওয়া, গ্রাহকের ঠিকানা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যাচাই না করা, হালনাগাদ বিমা পলিসি ও ট্রেড লাইসেন্স না নেওয়া, ল’ ইয়ার স্যাটিসফেকশন সার্টিফিকেট না নেওয়া, এনইসি গ্রহণ না করা, সহায়ক জামানতের অতিমূল্যায়নসহ যথাযথ রেকর্ডপত্র ছাড়া ঋণ প্রদানসহ অন্যান্য অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়।