সেকশন

শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১
 

কীর্তিময় জীবনের জন্য যাঁর অস্কার লাভ

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম

বাঙালির এক বিস্ময়ের নাম সত্যজিৎ রায়। যিনি একাধারে আলোকচিত্রী, চিত্রকর, সঙ্গীতজ্ঞ, শিশু সাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক, লেখক এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক। ভারতসহ বিশ্বব্যাপী সত্যজিৎ রায় একজন সাংস্কৃতিক প্রতিভূ। তাঁর মৃত্যুর পর কলকাতা তথা সিনেমার জীবনযাত্রা যেন থেমে পড়ে। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় এক গভীর প্রভাব ফেলেন। যাপিত জীবনের সাধারণ ঘটনাকে তিনি অসাধারণভাবে তাঁর ক্যামেরায় দেখিয়েছেন। তাঁর চলচ্চিত্র কৌশল অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ এবং বাংলাদেশের তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেলসহ অনেককে অনুপ্রাণিত করেছে।

মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে অত্যন্ত অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তাঁর জীবনের শেষ পুরস্কার ‘অস্কার’ গ্রহণ করেন।সত্যজিৎ রায় কোন সিনেমার জন্য অস্কার পাননি, তাঁকে অস্কার দেয়া হয়েছে তাঁর কাজের মূল্যায়ন বা কীর্তিময় জীবনের জন্য। অর্থাৎ সিনেমায় তাঁর ব্যাপক অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়। বলা যায় সারা জীবন সিমেমার পিছে ব্যয় করার পুরস্কার। তা অবশ্যই অস্কার ছিলো। তবে নিদিষ্ট কোন সিনেমার জন্য নয়, বরং তার সামগ্রিক সিনেমার জন্য।

এখনকার দিনে যদি গোটা বিশ্বের চলচ্চিত্র অঙ্গনের খ্যাতিমান কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতার তালিকা করা হয় তো এর মধ্যে স্টিফেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন, মার্টিন স্কোরসেসে, টিম বার্টন, উডি অ্যালেন, জর্জ লুকাস এই নামগুলো তালিকায় ওঠে আসবে। অথচ গত শতাব্দীর শেষ দিকেও যদি কাউকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ নির্মাতার নাম জিজ্ঞাসা করা হতো তখন এই কিংবদন্তি বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম উচ্চারিত হতো সবার আগে।

সত্যজিৎ রায়

তিনি এমন এক উজ্বল নক্ষত্র যিনি বাংলা চলচ্চিত্র তো বটেই এমনকি পুরো উপমহাদেশের চলচ্চিত্রকে এক অভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন। সত্যজিৎ রায় তাঁর সিনেমার চরিত্রগুলো সাহসী সৌন্দর্য্যে ভরিয়ে তুলতেন।

১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মর্তের বন্ধন ছিন্ন করে অনন্ত অসীমের যাত্রী হলেন প্রবাদপ্রতিম চিত্রপরিচলক সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। আশির দশক থেকেই তাঁর শরীর খারাপের দিকে যায়। ১৯৮৩ সালে ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমার কাজ করার সময়ে সত্যজিতের হার্ট অ্যাটাকও হয়। গুণী ছেলে সন্দীপ রায়ের সাহায্যে ১৯৮৪ সালে ‘ঘরে বাইরে’ নির্মাণ সমাপ্ত করেন তিনি। তার পর বাকি কয়েক বছর তাঁর কাজের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘আগন্তুক’। তিনটি সিনেমার বেশিরভাগ অংশ ইনডোর শুট করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। অসুস্থতার কারণে বেশি ঘোরাঘুরি করার সামর্থ ছিল না । শেষমেষ ১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ রায় বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সে অবস্থা থেকে তিনি আর ফেরেননি। শ্রদ্ধায়, শোকে শেষ বিদায় হলো ভারতীয় চলচ্চিত্রের রত্নকে।

তিনি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে কলকাতা রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সুকুমার রায় এবং পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী দুইজনেই বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিলো বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার মসূয়া গ্রামে। সমৃদ্ধশালী রায় পরিবারে জন্ম হলেও সত্যজিৎ রায়ের শৈশব মোটেও সুখকর ছিলো না। মাত্র তিন বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাঁকে বড় করেন।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে মায়ের ইচ্ছায় তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ না করে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনে ‘জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার’ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। চিত্রসজ্জা বা ভিজুয়াল ডিজাইন সত্যজিৎ রায়ের পছন্দের বিষয় হওয়ায় তিনি সুনামের সঙ্গে সেখানে কাজ করেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সত্যজিৎ রায় ও চিদানন্দ দাসগুপ্ত কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সত্যজিৎ রায় তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। সত্যজিৎ দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক।

পথের পাঁচালী- অপু ও দুর্গা

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ছবিটির নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং সে বছরই ছবিটির মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি ব্যাপক দর্শকনন্দিত হয়। এমনকি ভারতবর্ষের বাইরেও ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘পথের পাঁচালী’ মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কার। সত্যজিৎ রায় পরবর্তীতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ নামে আরো দুইটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ তিনটি চলচ্চিত্র একত্রে অপু ট্রিলজি হিসেবেই পরিচিত।

এছাড়াও সত্যজিৎ রায় ‘পরশপাথর’ নামের হাস্যরসাত্মক ছবি, জমিদারি প্রথার অবক্ষয় নিয়ে নির্মিত ‘জলসাঘর’; বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে ‘দেবী’; ‘তিন কন্যা’ এবং ‘অভিযান’ এবং ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ নামে রঙিন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

সত্যজিৎ রায়

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন ‘চারুলতা’। যেটি ছিলো তার কর্মজীবনের সফল ছবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে নির্মিত ছবিটিতে উনিশ শতকের এক নিঃসঙ্গ বাঙালি বধূ চারু ও ঠাকুরপো অমলের প্রতি তার অনুভূতির কাহিনী বাস্তব জীবনের নিরিখে নির্মাণ করা হয়েছে। ‘নায়ক’ ‍সিনেমায় উত্তম কুমার প্রধান চরিত্র বটে, কিন্তু গভীরভাবে দেখলে শর্মিলা ঠাকুরই যেন মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন । ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’ ও ‘জন অরণ্য’ ছবিও তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অগ্রগণ্য।

নায়ক সিনেমায় উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর

বাংলা চলচ্চিত্রের বাইরে সত্যজিৎ রায় ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ নামের হিন্দি ও উর্দু সংলাপ নির্ভর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটিই ছিলো বাংলা ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় নির্মিত সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র। পরবর্তীতে সত্যজিৎ প্রেমচাঁদের গল্পের ওপর ভিত্তি করে ‘সদ্গতি’ নামের হিন্দি ভাষায় এক ঘণ্টার একটি ছবি বানিয়েছিলেন।

সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ কিংবা ‘প্রোফেসর শঙ্কু’, পথের পাঁচালী, ‘নায়ক’র মতো সিনেমা ছাড়াও প্রতিটি শিল্প আজো সমান জনপ্রিয়।

অস্কার জয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান ও তার স্ত্রী সায়রা বানু তাদের ২৯ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কে যতি টানতে যাচ্ছেন।
শরতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর যে কাশফুল, তা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’তে সাদাকালো ক্যামেরায় চির রঙিন করে গেছে আরেক কিংবদন্তী সত্যজিৎ রায়। আর এটি দর্শকের সামনে জীবন্ত করে তুলে ধরেন,...
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও সংগীতশিল্পী। বাংলাদেশে তার পথচলা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সিনেমা ‘ভুবন মাঝি’ দিয়ে। এবার শবনম ফেরদৌসি পরিচালিত ‘আজব কারখানা’য়...
ঈদ উপলক্ষে গত ১১ এপ্রিল সারা দেশে মুক্তি পায় গিয়াস উদ্দিন সেলিম নির্মিত সিনেমা ‘কাজলরেখা’। এটি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মাল্টিপ্লেক্সে প্রদর্শিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে জায়গা...
নারায়ণগঞ্জে বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ তিন জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই জন। নিহতরা অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন এবং অভিনেত্রী সোহানা সাবাকে পরিবারের জিন্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুজনকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে...
নরসিংদীতে বাড়িতে ঢুকে এক নারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এসময় গুলিতে আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। হত্যার পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে...
লোডিং...
Nagad Ads
সর্বশেষপঠিত

এলাকার খবর


© ২০২৫ প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত